স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ জহুরুল ইসলাম। পিতার নাম নুরুল ইসলাম। ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে বজরাপুর গ্রামের হঠাতপাড়ায় বাড়ি। তারা দুই ভাই, এক বোন। বড় ভাই নজরুল ইসলাম মাছের ব্যবসা করেন। বোন টিয়া, গ্রামেই বিয়ে হয়েছে। জহুরুলের ১ স্ত্রী, ১ ছেলে জসিম (২২), মেয়ে রাবেয়া খাতুন (১৬) ও সাদিয়া খাতুন (৭)। বর্তমানে পেশায় সে খাস্তা (লাড্ডু) বিক্রেতা। দু’বছর আগে সে চায়ের দোকানদার ছিল। পাকা বাড়ি, ৪ রুম বিশিষ্ট। লাড্ডু তৈরির কারখানা ছিল তার বাড়ির ভেতরেই। ওই বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেয়া হতো না। আশপাশের কোন ব্যক্তিই তার বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারত না। এমনকি জহুরুল নিজেও পাড়া প্রতিবেশী বা গ্রামের কারও বাড়িতে ঢুকত না। তার স্ত্রী ও মেয়েদের দেখা যেত না। তারা সব সময়ই বাড়ির ভেতরে থাকত। তবে ব্যবসার আড়ালে তার বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা ছিল।
হঠাৎ করে তার বাড়িটি শনিবার রাত থেকে পুলিশ ঘিরে ফেলে। রবিরোববার সকালে অভিযান শুরু করে। অভিযান চলাকালে দু’জন আত্মঘাতী জঙ্গী নিহত হয়েছে। অভিযানের সময় গুরুতর আহত হন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি নাজমূল ইসলাম ও মহেশপুর থানার এসআই মহসিন। তাদের মধ্যে এডিসি নাজমূল ইসলামকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং মহসিনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হঠাৎ করে গ্রামটিতে ব্যাপক পুলিশ দেখে এক রকম হতভম্ব হয়ে পড়েন গ্রামবাসী। তারা ধারণাও করতে পারছেন না এখানে এত বড় ধরনের একটি জঙ্গী আস্তানা থাকতে পারে।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, মহেশপুরের বজরাপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের বাড়িটি ছিল নব্য জঙ্গীদের আস্তানা। সেখানে তারা ব্যবসার পাশাপাশি জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলে। তার বাড়িতে জঙ্গীরা আসা-যাওয়া করত। অভিযান চলাকালে এ জঙ্গী আস্তানায় ২ জন জঙ্গী নিহত হয়। গ্রেফতার করা হয় বাড়ির মালিক জহুরুল ইসলাম তার ছেলেকে। তারাও নব্য জেএমবির সদস্য। তাদের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ অভিযানে স্থানীয় পুলিশ, কাউন্টার টেররিজ ইউনিট ও বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা অংশ নেয়। বজরাপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের প্রতিবেশী রাবেয়া বেগম বলেন, আমরা জহুরুলকে হুজুর মনে করতাম। তার স্ত্রী ও মেয়েরা বাড়ির বাইরে যেত না। কিন্তু আজ আমরা হতবাক। তার বাড়িতে যে বড় ধরনের জঙ্গী আস্তানা ছিল তা আমরা কোনদিন ধারণা করতে পারেনি। আমরা এসব জঙ্গীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিবেশী শরিফা বেগম বলেন, আমরা জহুরুলের বাড়ির পাশ দিয়ে প্রায় সব সময়ই চলাফেরা করি। তার বাড়ি গেট সব সময় বন্ধ থাকে। ওরা খাস্তা (লাড্ডু) বানায়, বাইরে থেকে লোক এসে নিয়ে যায়। তাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেয় না। বাড়ির পাশে বশত করেও তাদের কোন খবর আমরা জানি না। গ্রামের আক্তারুজ্জামান বলেন, আমরা জানতেই পারেনি। সকালে কাজে যাব হঠাৎ দেখি পুলিশ এসে ভরে গেছে। আমরা কাজ-কর্ম বন্ধ করে বাড়িতে বসে আছি। খুব ভয়ে আছি। তিনি বলেন, এ ধরনের জঙ্গীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
এসবিকে ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, আমরা সব সময় এ গ্রামে আসা যাওয়া করি। কোনদিন ধারণাও করতে পারেনি এখানে জঙ্গী আস্তানা থাকতে পারে। একজন খাস্তা (লাড্ডু) বিক্রেতা যে ভয়ঙ্কর জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে তা আমরা ভাবতেও পারেনি। এখন মনে হচ্ছে জামায়াত অধ্যুষিত এই মহেশপুর অঞ্চলে আরও জঙ্গী ঘাঁটি থাকতে পারে। সে ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমি দাবি জানাচ্ছি। মহেশপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা জঙ্গীদের অবস্থানের খবর পেয়ে বিস্মিত হয়ে পড়েছি। কিভাবে তারা এই অজ পাড়াগায়ে আস্তানা গেড়েছিল। কেউ আমরা আগে থেকে জানতে পারেনি। আমরা এই জঙ্গীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।