নিউজ ডেস্ক:
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর—এ তিন মাসে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকেরই লোকসানি শাখা বেড়েছে। এ সময়ে অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়লেও সোনালী ও জনতার কিছুটা কমেছে।
গত আগস্টে সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব নিয়েছেন। এ অবস্থায় ব্যাংক তিনটিতে কেউ খেলাপি ঋণ কমাতে আবার কেউ প্রকৃত তথ্য বের করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। ফলে কারও উন্নতি, আবার কারও অবনতিও হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক: সেপ্টেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা বেড়ে হয়েছে ৩৭৩টি। জুন শেষে লোকসানি শাখা ছিল ২৯০টি। এ সময়ে ব্যাংকটির শাখা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৮টি। তবে সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমে হয়েছে ৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৯ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পাশাপাশি সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতিও কমে হয়েছে ২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা; যা জুন শেষে ছিল ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের বাইরে রয়েছেন। অন্য কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
অগ্রণী ব্যাংক: এ ব্যাংকের মোট ৯৩৫টি শাখার মধ্যে সেপ্টেম্বর শেষে লোকসানে পড়ে ১২৩টি, জুন শেষে যা ছিল ৯৯টি। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণও বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭১১ কোটি টাকা; যা জুন শেষে ছিল ৪ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি হয়েছে ১১২ কোটি টাকা। জুন শেষে মূলধন ঘাটতি ছিল ১৯৯ কোটি টাকা।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গ্রামেগঞ্জে কম সুদে ঋণ দিয়ে থাকি। এসব ঋণে আমাদের মুনাফা বেশি থাকে না। বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় এর তুলনায় খরচ বেশি। এ কারণে অনেক শাখা লোকসানে চলে গেছে।’
জনতা ব্যাংক: সেপ্টেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের লোকসানি শাখা বেড়ে হয়েছে ৯৯টি। জুন শেষে লোকসানিতে ছিল ৭৪টি। ব্যাংকটির শাখা বর্তমানে ৯১০টি। লোকসানি শাখা বাড়লেও সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমে হয়েছে ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে মূলধন ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৭৭১ কোটি টাকা। গত জুনে ঘাটতি ছিল ৬৬৪ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমে আসছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শাখাগুলো লোকসানে চলে গেছে। বছর শেষে মুনাফা ভাগাভাগি হলে এসব শাখা মুনাফায় ফিরবে। আমরা ব্যাংকটিকে ভালো অবস্থায় নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
রূপালী ব্যাংক: সেপ্টেম্বর শেষে রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা বেড়ে হয়েছে ১৪৩টি। জুন শেষে লোকসানি শাখা ছিল ১২৬টি। ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা ৫৬১টি। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ২৯ কোটি টাকা। জুনে খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতিও বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। জুন শেষে ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫২ কোটি টাকা।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘আগে অনেক অনিয়মিত ঋণকে নিয়মিত দেখানো হয়েছে। এখন প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসছে। ফলে খেলাপির পাশাপাশি লোকসানি শাখাও বেড়েছে। এখন সব তথ্য অনলাইনে থাকায় প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ফলে পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে।’
ব্যাংকিং-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা, পর্যবেক্ষক নিয়োগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি—এরপরও আর্থিক অবস্থার অধোগতি ঠেকানো যাচ্ছে না সরকারি খাতের এসব ব্যাংকের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া ঋণই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব ব্যাংকের জন্য।