নিউজ ডেস্ক:
‘লাইলাতুল’ বা ‘শব’ অর্থ রাত। আর বরাত অর্থ মুক্তি। এক কথায় লাইলাতুল বরাত অর্থ মুক্তির রাত। গুনা থেকে মুক্তির রাত। এ রাতটি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫তম রজনী। বায়হাকি ও ইবনে মাজায় এসেছে— হজরত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যখন শাবান মাসের ১৫ রজনী আসে অর্থাৎ বরাতের রাত আসে, তখন তোমরা রাত জাগরণ কর! অর্থাৎ নফল ইবাদত কর। বিশেষভাবে নফল নামাজ পড় এবং পরদিন রোজা রাখ। কেননা আল্লাহ রব্বুল আলামিন এই রাতে প্রথম আসমানে চলে আসেন। তিনি তাঁর বান্দাদের ডেকে ডেকে বলতে থাকেন, তোমাদের কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করার আছ কি? যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কেউ আমার কাছে রিজিক চাওয়ার আছ কি? যে রিজিক চাইবে, আমি তাকে রিজিক দান করব। কেউ বিপদগ্রস্ত বা রোগ-শোকগ্রস্ত আছ কি? আমার কাছে রোগ-শোক থেকে মুক্তি চাইবে, আমি তাকে মুক্তি দিয়ে দেব। রসুল (সা.) আরও বলেন, এভাবে আল্লাহ একেকটা বিষয় উল্লেখ করে করে বলতে থাকেন, অমুক অমুকটা চাওয়ার কে আছ? আমি তাকে দান করব। আল্লাহ সুবহে সাদিক পর্যন্ত ডেকে ডেকে বলতে থাকেন। আমার কাছে চাও, আমার কাছে চাও, আমার কাছে চাও। উল্লিখিত হাদিসের বর্ণনা দ্বারা বোঝা গেল, লাইলাতুল বরাতে রব্বুল আলামিনের দয়া, করুণা ও ক্ষমা বান্দার খুব কাছে চলে আসে। সুতরাং বোঝা গেল, উল্লিখিত রাতটি আল্লাহর কাছে চাওয়ার রাত। কী কী চাইতে হবে তা হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এক. আল্লাহর কাছে তামাম গুনা থেকে মুক্তির জন্য চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সব গুনা থেকে মুক্তি নিয়ে কোনো বান্দা কবরে গেলে সে জীবনে সবচেয়ে বড় সফলতা অর্জন করল। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : ‘তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম। ’ (সূরা বাকারা : ৫)। একজন মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রে সফলতা আসে আল্লাহর ভয়কে দিলে (অন্তরে) রেখে আল্লাহর বিধিবিধান মানার মধ্যে। যুগে যুগে আম্বিয়ায়ে কিরাম (আ.)-এর পর যারাই আল্লাহর ভয় দিলে রেখে শরিয়তের ওপর নিজেদের চালিয়েছেন তারাই জীবনে সফলতা অর্জন করেছেন। বস্তুত ইমানদার ব্যক্তিরাই এ কথা বুঝতে পারেন যে, এই নশ্বর দুনিয়ার কোনো বস্তুই আমাদের জন্য স্থায়ী নয়। আমাদের জান ও মালের একমাত্র মালিক আল্লাহ। তাই তো ইমানদার ব্যক্তিরা সময়-সুযোগ পেলেই তাঁর ইবাদতে মশগুল হয়ে যান। আল্লাহর বিশেষ দিন ও রাতকে ইবাদত করার জন্য মহামূল্যবান মনে করেন। যদি কখনো শয়তানের ধোঁকায় কোনো গুনা হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে খালিস দিলে তওবা করেন এবং গুনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। বুখারির মধ্যে বড় একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সারসংক্ষেপ হলো : বনি ইসরায়েলের মধ্যে একটি অনিন্দ্যসুন্দরী মহিলা ছিল। তার সুন্দরের আকর্ষণে অনেক মানুষ মুগ্ধ হয়ে যেত। একবার এক লোক ওই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে কুমতলবে তার পাশে গিয়ে বসে পড়ল। পরক্ষণেই তার অন্তরে আল্লাহর স্মরণ ও ভয় এসে গেল। সে আপন মনে বলতে লাগল, হায় আল্লাহ! আমি এ কী করছি। আমি কোন মুখে তোমার সামনে দাঁড়াব। এই কথাগুলো স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিলে কম্পন শুরু হয়ে গেল। ওই মেয়েটি লোকটির এ অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করল, কী হয়েছে আপনার? আপনার এ অবস্থা কেন হলো? লোকটি মেয়েটির কথার কোনো উত্তর না দিয়ে কান্না করতে করতে সেখান থেকে বের হয়ে গেল। ওই লোকটির খওফে ইলাহি তথা আল্লাহর ভয়ের অবস্থা দেখে মেয়েটির মনে আল্লাহর ভয় এসে গেল। সে মনে মনে বলতে লাগল ওই লোকটির যেমন আল্লাহ আছেন আমারও তো আল্লাহ আছেন। তার আল্লাহ যিনি আমার আল্লাহও তো তিনি। লোকটির গুনার কথা খেয়াল আসাতেই আল্লাহতায়ালার এত ভয় তার দিলে এসে গেল। অথচ আমার জীবন তো গুনার মধ্যেই শেষ করে ফেললাম। তাহলে আমার অন্তরে আল্লাহর ভয় কী পরিমাণ আসা দরকার? এই কথাগুলো দিলে আসার সঙ্গে সঙ্গে দয়াময় আল্লাহর দরবারে খালিস নিয়তে তওবা করল, অতীত গুনার জন্য অনুতপ্ত হলো এবং জীবনে কোনো দিন আর গুনা না করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলো। তারপর আল্লাহর ইবাদতে একাগ্রমনে মগ্ন হলো। ইবাদত করতে করতে মেয়েটির হঠাৎ মনে হলো ওই লোকটির কারণে আমার জীবনে এত পরিবর্তন। তার থেকে দীনি তালিম শিক্ষা করা উচিত। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল তার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলে ভালো হয়। তার থেকে দীনি তালিম নিয়ে ইবাদতে মগ্ন থাকব। এই খেয়ালে মেয়েটি তার বাড়িতে গেল। লোকটি যখন বাড়িতে মেয়েটিকে দেখল, সঙ্গে সঙ্গে লোকটির আগের গুনার কথা মনে পড়ে গেল। জোরে চিৎকার দিয়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরকালের পথে চলে গেল সে।
লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা, ঢাকা।