নিউজ ডেস্ক:
জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কিংবা কর্মস্থলে সহকর্মীর সঙ্গে অথবা বন্ধুদের আড্ডায় কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই কথা যেন শেষ হয়ে যায়।
এর ফলে নিজের মধ্যেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। মনে হতে পারে যে, আমি আসলে ততটা আকর্ষণীয় না যতটা আসলে আমি ভাবি। কিংবা আমি কি খুব বেশি বিরক্তিকর?
না, আপনাকে বিরক্তিকর মানুষের আখ্যা দেওয়া হচ্ছে না। সবারই আকর্ষণীয় হওয়ার যোগ্যতা বা গুণ আছে। কিন্তু আপনার মনে যদি ভয়ের সঞ্চার হয় যে, আপনি বিরক্তি মানুষ হিসেবে পরিণত হতে যাচ্ছেন কিনা, তাহলে নিচের লক্ষণগুলো থেকে জেনে নিন যে, কোন অভ্যাসের কারণে একজন মানুষ আসলে খুবই বিরক্তিকর হিসেবে গণ্য হয়। চরম বিরক্তিকর মানুষের ১৫ অভ্যাস নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ শেষ পর্ব।
* বিরক্তিকর মানুষের অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিছু চিন্তা করতে পারে না : ড্রিউঅস্টিন বলেন, বিরক্তিকর ব্যক্তিরা কখনোই কোনো কথোপকথনের অপর দিকের কথা চিন্তা করেন না। অর্থাৎ অন্য ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা কেমন সেটা তারা ভাবেন না।
তিনি আরো বলেন, একজন ব্যক্তি যখন অন্য আরেকজনের অবস্থান বা পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে পারবে তখনি সে আকর্ষণীয় ও কথোপকথনযোগ্য ব্যক্তি হয়ে উঠবে।
* বিরক্তিকর মানুষের কথোপকথনে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করতে চান না : ম্যারিহলান্ড বলেন, ‘একজন মানুষ তখনি বিরক্তিকর হয়ে উঠবেন যখন সে তার কথোপকথনে অন্য কাউকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইবেন না। আর সেটি উপলব্ধি করা যায় তখনি যখন সেই বিরক্তিকর ব্যক্তিটি শুধুমাত্র তার নিজের বক্তব্যকে অতিমাত্রায় ব্যাখা করতে চান। হোক সেটা প্রয়োজনীয় কিংবা অপ্রয়োজনীয়।
যদি আপনি বুঝতে না পারেন যে আপনার কথোপকথন থেকে কেউ নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে তাহলে বুঝতে হবে আপনি একজন বিরক্তিকর মানুষ।
* বিরক্তিকর মানুষের উন্নয়নের দক্ষতা কম : প্রতিটি কথোপকথনের আগে যদি আপনি তা লিখে নিয়ে যান এবং আপনি যদি সেটা থেকে বের হয়ে না আসতে পারেন তাহলে আপনার সমস্যা আছে বা হচ্ছে।
এরিকডায়াজ তার এক লেখনীতে বলেন, ‘আমার জীবনে এমন অনেক সময় এসেছে যখন কেউ একজন কোনো একটি বিষয়ে খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল অথচ আমি তাদের সে ব্যাপারগুলো সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কিন্তু তারপরেও আমি আমাদের মধ্যকার কথোপকথন চালিয়ে যাওয়ার জন্য তার ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত আমার কিছু কথা আমি বলতাম।’
ভালো কথোপকথনকারীকে যে একেবারে যথার্থ কথাই বলতে হবে তা নয়। এমন কিছু বলতে হবে যেটা অপর ব্যক্তির কথা বলার আগ্রহ ধরে রাখবে। কথোপকথন হচ্ছে, ক্যাচ খেলার মতো। আপনি যদি বল আবার ছুড়ে না মারেন তাহলে খেলা শেষ।’
* একঘেয়েমি কথাবার্তা : ভাইভাবখাত্রির মতে, ‘যখন কোনো বক্তা একঘেয়েমিপূর্ণ কথা বলবে তখন সে স্বাভাবিক ভাবেই বিরক্তিকর ব্যক্তিদের কাতারে পড়ে যাবে।’
খাত্রি আরো বলেন, ‘আপনার এমন অবস্থা সবাইকে এটাই ভাবতে বাধ্য করবে যে আপনি হাসি-তামাশার মধ্যেও সিরিয়াস হয়ে গেছেন এবং তারা কখনোই আপনি কোন বিষয়টি নিয়ে উত্তেজিত ছিলেন সেটা বলতে পারবে না এবং সেই সঙ্গে তারা এটাও বিশ্বাস করবে যে আপনি সব কিছুই ঘৃণা করেন।’
* সবসময় নেতিবাচক : ডায়ালানউন মনে করেন, ‘যেসকল ব্যক্তি সবসময় নেতিবাচক ও হতাশাপূর্ণ থাকে তারাই বিরক্তিকর।’ তিনি নেতিবাচকতাকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন।
১. ভিকটিম মেন্টালিটি : কেন আমার সঙ্গেই এমন হয়? আমার প্রতিই কেন এই অবিচার ?
২. মানসিক অসুস্থতা : ওর জন্য আমি এই কাজটা করতে পারলাম না।
৩. দোষারোপ করার মানসিকতা : এর দায়ভার রাষ্ট্রের। তাদের জন্য আজ এই দুর্দশা। এটা সম্পূর্ণ তাদের দোষ।
* কথার পুনরাবৃত্তি : কখনো কি অতিমাত্রায় বিরক্তিকর কোনো কথোপকথনের কথা শুনেছেন? বা আশেপাশের কেউ এসে কি কখনো বলেছে যে অমুক জায়গায় অমুকের কথা খুবই বিরক্তিকর। বা তার গল্প খুবই বিরক্তিকর।
ফাতিমা নাদিম বলেন, ‘কথা বলার সময় একি কথা বার বার নিয়ে আসলে সেই ব্যক্তি অতিমাত্রায় বিরক্তিকর হিসেবে গণ্য হয়।’
একি জিনিস নিয়ে না থেকে প্রতি ঘণ্টায় নতুন কিছু দেখুন বা পড়ুন। বিগত কয়েক ঘণ্টার আলোচনা নিজে পর্যালোচনা করুন।
* তারা সবসময়ই বিরক্ত/উদাসীন : নেলাক্যানভিচ বলেন, ‘আমি সেই সকল লোকের কথায় বিরক্ত, যারা কথায় কথায় বলে বসে তাদের কিছু ভালো লাগে না, সবসময় উদাস উদাস লাগে।’
সব সময় যদি আপনি ভেবেই থাকেন আপনার কিছুই ভালো লাগছে না, সব কিছুই কেমন বিরক্তিকর তাহলে উদাসীনদের দলে আপনাকে স্বাগতম। যা কিছু ভালো লাগে সেই জিনিস নিয়ে আপনার মনের আনন্দ প্রকাশ করুন। সবাইকে দেখিয়ে দিন যে আপনি বিরক্তিকর না। আপনার ইচ্ছাই আপনাকে উদাসীনতা থেকে মুক্ত করবে।
তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার