বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫

চতুর্মুখী বিপদে কুলকিনারা না পেয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ট্রুডোর!

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজ দল লিবারেল পার্টির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। ঘোষণাটি আসতে পারে আজই (৬ জানুয়ারি) এবং যেকোনো সময়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তটি হঠাৎ করে আসেনি। সংখ্যালঘু, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আবাসন সংকট ও  রাজনৈতিক নানা সংকটে আছে ট্রুডোর দল ও সরকার। সম্প্রতি সংকটগুলো একসঙ্গে ধেয়ে আসায় কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না তিনি।

৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে কানাডার ক্ষমতায় থাকা জাস্টিন ট্রুডোর আসন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বলে গত মাসে খবর প্রকাশ করেছিল বার্তা সংস্থা রয়টার্স। খবরে বলা হয়, ‘তার ক্ষমতাচ্যুতি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সরকারের প্রধান শরিক দলও ট্রুডোর ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বছরের শুরুতেই ট্রুডো ক্ষমতা হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

রয়টার্সের তথ্যমতে, গত মাসে নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এনডিপি) নেতা জাগমিত সিং বলেছেন, ট্রুডোর সংখ্যালঘু লিবারেল সরকারের পতন ঘটাতে এবং একটি নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেবেন তিনি। এরই মধ্যে এ বিষয়ে তিনি ট্রুডোকে খোলা চিঠিও লিখেছেন।

সে সময় জাগমিত সিং জানান, আগামী বছরের ২৭ জানুয়ারি শীতকালীন বিরতি শেষে হাউস অব কমন্সে তিনি অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। যদি সব বিরোধী দল প্রস্তাবটিতে সমর্থন দেয়, তাহলে ট্রুডোকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর কানাডায় নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

গত কয়েক মাস ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও আবাসন সংকটের জেরে তীব্র চাপের মুখে রয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। তার জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

দেশটির বেশ কয়েকটি জরিপে গত ডিসেম্বরে বলা হয়, ‘কানাডায় এখন নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি ডানপন্থি কনজারভেটিভদের কাছে পরাজিত হবে।’ এর পেছনে মূল্যস্ফীতি ও আবাসন সংকট নিয়ে ভোটারদের ক্ষোভকে দায়ী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এ ছাড়া, বাণিজ্য কেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্রের নানা চাপ ছিল কানাডার ওপর। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল ট্রাম্প সরাসরি ট্রুডো ও তার সরকারকে হুঁশিয়ারিও দেন।

অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচারের জন্য কানাডাকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়েও রেখেছিলেন। সেসময় ট্রুডোকে পাশে বসিয়ে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ‘অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচারের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হলে কানাডাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত করা হবে।’

অপরদিকে, কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে একজন শিখ নেতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ট্রুডোর সরকার ভারতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলে। এরপর ভারতে শিখদের জন্য ‘খালিস্তান’ নামে আলাদা রাষ্ট্রের দাবিটি নতুন করে আবার আলোচনায় আসে। এতে দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে।

এদিকে, পদত্যাগের ঘোষণার পর ট্রুডো তৎক্ষণাৎ গদি ছেড়ে দেবেন নাকি নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হওয়ার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ট্রুডোর পদত্যাগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সূত্রের বরাত দিয়ে  দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল জানায়, লিবারেল পার্টির অন্তর্বর্তীকালীন নেতা ও কানাডার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে অর্থমন্ত্রী ডোমিনিক লেব্লাংক আগ্রহী কিনা সে বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছেন ট্রুডো। তবে লেব্লাংক নিজেই নির্বাচনে অংশ নিলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে না।

রয়টার্স বলছে, ট্রুডোর সম্ভাব্য এই পদত্যাগের ফলে দেশটির ক্ষমতাসীন এই দলটি চলতি বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে লিবারেলরদের  কাছে হেরে যেতে পারে । ট্রুডোর পদত্যাগের ফলে নতুন সরকার গঠনের জন্য দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান জানানোরও সম্ভাবনা রয়েছে।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular