নিউজ ডেস্ক:
ছুটছে সময়, সঙ্গে ছুটছে জীবন যাত্রাও৷ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মেকআপ করার সময় কারও নেই৷ তবে নিজেকে তো টিপটপ রাখতেই হবে৷ পর্যাপ্ত ঘুম, খাওয়াদাওয়া আর নিয়মিত পরিচর্যার প্রভাব ত্বকের উপর পড়তে বাধ্য, তার সঙ্গে যথাযথ মেক-আপ হলে তো কথাই নেই! তবে সময়ের অভাবে যদি মেক-আপ নিয়ে চিন্তিত, তাহলে জানিয়ে রাখি আপনার দুচিন্তার দিন শেষ। দরকার শুধু মেক-আপ কিটে কিছু এসেনশিয়াল আইটেমের উপস্থিতি আর কিছু স্মার্ট মেক-আপ টেকনিক রপ্ত করে ফেলা। চটজলদি সেজে আপনিই হয়ে উঠবেন সকলের মধ্যমণি৷ রইল আপনার জন্য কিছু টিপস৷
ফেস মেক-আপ
প্রথমে মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে মুখ আর গলা পরিষ্কার করে নিন। ত্বক পরিষ্কার না থাকলে যতই মেক-আপ করুন না কেন, ভাল লাগবে না। এবার বডি লোশন কিংবা বডি বাটার লাগিয়ে নিন। বেস মেক-আপ প্রসাধন পর্বের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রথমে ভাল করে টিন্টেড ময়শ্চারাইজার লাগান। হালকা ময়শ্চারাইজার স্মুদ বেস ফিনিশ তৈরি করতে সাহায্য করে। এর সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর রোদ থেকে ত্বককে রক্ষা করে, ত্বকে একটু জেল্লাও আনে। না হলে ত্বক খসখসে দেখাবে। মুখে কোনও দাগ থাকলে কনসিলার ব্যবহার করুন। চোখের তলার কালি ঢাকার জন্যেও কনসিলারের থেকে ভাল অপশন আর কিছু নেই। এরপর ফাউন্ডেশন লাগাতে হবে। ফাউন্ডেশন বাছাটা কিন্তু একটু মুশকিল। ফাউন্ডেশন কেনার সময় মুখে একটু লাগান। হাতেও লাগাতে পারেন। যদি দেখেন আপনার ত্বকের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, তা হলেই বুঝবেন যে এটাই আপনার জন্যে রাইট চয়েস। এগুলো পর পর ফেস মেক-আপে ব্যবহার করলে তো ভালই হয়, কিন্তু ব্লেন্ড করার ঝামেলায় না যেতে চাইলে বিবি অথবা সিসি ক্রিম লাগাতে পারেন। মেক-আপ হয়ে গেলে একটু ফেস পাউডার পাফ করে নিন। তবে যাই করুন না কেন খেয়াল রাখবেন মেক-আপ যেন স্মাজ না হয়ে যায়, যথা সম্ভব ন্যাচারাল লুক বজায় রাখাই কাম্য। একটা ব্রাশ দিয়ে গালের বাইরের দিকে ব্রনজা়র ডাস্ট করে নিন। চিকবোনের তলা থেকে শুরু করুন আর টেম্পল পর্যন্ত ডাস্ট করুন। ঘাড়ে, গলাতেও লাগিয়ে নিন। তবে দিনের চেয়ে রাতে ব্রনজ়ার লাগানোই ভাল। হাইলাইটার ত্বকের সুন্দর দিকগুলোকে যেমন তুলে ধরে, সেখানে ব্রনজার ত্বকে গ্ল্যামারাস শাইন তৈরি করে। মনে রাখবেন, মেক-আপ মানেই কিন্তু অত্যধিক সাজ নয়। হালকা মেক-আপেও দারুণ লুক ক্রিয়েট করা যায়।
লিপ স্টোরি
সারা মুখে বিশেষ মেক-আপ না করেও নজর কাড়তে পারেন একটা দারুণ শেডের লিপস্টিক দিয়ে। ঠোঁট রাঙিয়ে নিন ট্রেন্ডি লিপ ক্রেয়নে। কোরাল, পার্পলের মতো উজ্জ্বল রঙে আপনার পুরো লুকটাকেই করে তুলবে গ্ল্যামারাস, যার ফলে বাকি মেক-আপ না করলেও চলবে। চোখ বা ঠোঁটের মধ্যে যে কোনও একটা অংশ হাইলাইট করুন। একসঙ্গে দু’টো অংশই হাইলাইট করবেন না। ডিপ স্মোকি আইজ পছন্দ করলে, ঠোঁটে ন্যাচারাল শেডের লিপকালার ব্যবহার করুন। বেশিক্ষণ কভারেজের জন্যে প্রথমে লিপ বাম লাগিয়ে নিন, তার ওপর ম্যাট লিপস্টিক লাগান। শেষ মুহূর্তে মেক-আপের শেড নিয়ে কনফিউশন হলে জেনে রাখুন, ফরসা, গমরঙা বা শ্যামলা, সব ধরনের স্কিন টোনের সঙ্গে ন্যুড লুক ভাল কাজ করে।
আই মেক-আপ
আগের রাতে যথেষ্ট ঘুম না হলে তার প্রভাব মুখ-চোখে পড়তে বাধ্য। তাই ইনস্ট্যান্ট গ্ল্যামের জন্য চটপট ব্রাইট আই লাইনার লাগিয়ে নিন, এক্সপেরিমেন্ট আপত্তি না থাকলে রঙিন আই লাইনার দারুণ লাগবে। আইলিডের ওপর নিউট্রাল শেডের আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। যত্ন করে লিক্যুইড আই লাইনার লাগাতে না পারলে, কোহল পেনসিল ব্যবহার করুন। একটা কথা মনে রাখবেন, আই মেক-আপ করতে বসলে মাস্কারা কিন্তু মাস্ট! ইলাবোরেট আই মেক-আপ না করতে পারলেও অবশ্যই মাস্কারা লাগাবেন। তা ছাড়া, সুন্দর করে শেপ করা আইব্রো কিন্তু আপনার গোটা লুকটাই বদলে দিতে পারে। সময়ের অভাবে আইব্রো না করতে পারলে ক্লিয়ার মাস্কারা ব্যবহার করে শেপ করে নিলেও ভালই এফেক্ট আসবে।
হেয়ার স্টাইল
এ তো গেল মেক-আপের কথা। চুলের কথা ভুললে চলবে না কিন্তু! একটা দারুণ হেয়ার-ডু সকলের মধ্যেও আপনাকে করে তুলবে এক্কেবারে আলাদা। তবে একটু বুদ্ধি খাটালে কিন্তু তাড়াহুড়োর মধ্যেও বেশি সময় না দিয়ে সুন্দর হেয়ারস্টাইল করে ফেলা যায়। আগের দিন রাতে হালকা হাতে মুজবা ক্রিম লাগিয়ে নিন। এবার দুটো বিনুনি করে শুয়ে পড়ুন। সকালবেলা উঠে দেখবেন কেমন সুন্দর সফট কার্লস পেয়ে গিয়েছেন! হাই পনিটেল করে চুল ২-৪ ভাগে ভাগ করে নিন (চুলের ঘনত্বের উপর নির্ভর করে) এবার প্রতিটা সেকশন কার্লারের সাহায্যে কার্ল করে নিন। চুলের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এলে পনিটেল খুলে ফেলুন। পেয়ে যান অনবদ্য কার্লি হেয়ারস্টাইল! টপ নট করে ফেলুন, সঙ্গে লাগিয়ে নিন মানানসই হেয়ার অ্যাকসেসরি, সময়ও বাঁচল, স্টাইলও হলো! হেয়ার ডু করার জন্যে হাতে বিশেষ সময় নেই? সিম্পল পনিটেল করুন। অল্প একটু হেয়ার স্প্রে লাগিয়ে নিন। চুল ঘেঁটে যাবে না। খোলা চুলে স্টাইল করতে চাইলে, চুল উল্টে নিয়ে ব্যাক কোম্ব করে নিন, ইনস্ট্যান্ট ভলিউম পেয়ে যাবেন। সুন্দর ব্যাক ক্লিপ দিয়ে চুল আটকে রাখতে পারেন। ছোট চুলে ভলিউম আনতে চাইলে রোলার লাগান। তারপর চুলের সামনের দিকে পিন করে চুল খুলে রাখুন।
কুইক বিউটি টিপস
মেক আপের আগে একটা ফেশিয়াল করতে পারলে ভাল। সম্ভব না হলে এক্সফোলিয়েট করতে পারেন বা ফেশিয়াল মাস্কও লাগাতে পারেন। ইলাবোরেট মেক-আপ না করলেও চলবে, শুধু নিজের মুখের সবথেকে সুন্দর অংশটিকে হাইলাইট করুন। আই লাইনার ও মাস্কারা অন্যরকম ভাবে ব্যবহার করে চোখের নতুন শেপ দিতে পারেন, ব্লাশার দিয়ে চিকবোন হাইলাইট করতে পারেন, ব্রাইট নেল কালার ট্রাই করতে পারেন। বহুদিনের ফেলে রাখা ফাউন্ডেশন আর অনেক পুরনো লিপস্টিক দিয়ে মেক-আপ করলে আপনার সাজ খুব একটা খুলবে না। তাই মেক-আপ কিটে ঠিকঠাক জিনিস রাখুন। বিবি ক্রিম, কনসিলার, লিপ কালার, নানা ধরনের ব্রাশ কিন্তু মাস্ট। চেষ্টা করুন ভাল ব্র্যান্ডের মেক-আপ প্রোডাক্টস কিনতে। খরচ একটু বেশি হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘদিন মেক-আপ ভাল থাকে আর এর থেকে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও কম। চোখের ওপর গোল্ড ও সিলভার শেড থাকায় আর বিশেষ কিছু মেক-আপ না করলেও হবে।
চটজলদি মেক-আপের পিছনে বেশি না খেটেও গ্ল্যামারাস লুক পেতে চাইলে জোর দিন জুতো, ব্যাগ আর অ্যাকসেসরিজের উপর। যেমন, চাঙ্কি কানের দুল, স্কার্ফ, নজরকাড়া নেকপিস অথবা ব্রাইট কালারের ব্যাগ ক্যারি করতে পারেন। আর অবশ্যই খাওয়া দাওয়া বিষয়টি আপনাকে মাথায় রাখতেই হবে৷