প্রতিনিধি : আবু হানিফ, মোঃ বায়েজিদ
তিস্তা ছাড়া গাইবান্ধার সবকটি নদ-নদীর পানি নামতে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৩৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার (২৬ জুন) নতুন করে জেলার আর কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। পানি কমতে থাকায় গাইবান্ধায় উন্নতি হচ্ছে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির। তবে নীচু এলাকার ঘর-বাড়ি থেকে এখনো পুরোপুরি পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ কমেনি এসব এলাকার বন্যাকবলিত মানুষদের। এছাড়া এখনো স্বাভাবিক হয়নি জেলার চার উপজেলার চর-নিম্নাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এমন অবস্থায় নিজেদের খাদ্য সংকটের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্যসংকট নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত এসব পরিবারগুলো। অপরদিকে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে ভাঙন। অনেকেই বসতবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যাদের সামর্থ্য আছে তারা বিভিন্ন উঁচু এলাকায় চলে যাচ্ছেন, তবে নিতান্তই যাদের উপায় নেই, নিয়তিই তাদের একমাত্র ভরসা।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় গাইবান্ধায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের ৬১ হাজার মানুষ। নিমজ্জিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকার পাট, বাদাম ও শাকসবজিসহ দুই হাজারের বেশি হেক্টর জমির ফসল। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুকুর ও মৎস্য খামার। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ব্যাহত হয় যোগাযোগব্যবস্থা। বন্ধ ঘোষণা করা হয় দুর্গত চার উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ ১২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বন্যা দুর্গত জেলার চার উপজেলার ১৬৫টি চর-দ্বীপচরের অনেক মানুষ এখনও বাড়িঘরে ফিরতে পারেনি। উঁচু জায়গা ও সরকারিভাবে খোলা ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখনও অবস্থান করছে কয়েক হাজার বানভাসী মানুষ। দুর্গত অধিকাংশ এলাকাতেই খাবার সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির অভাব প্রকট হয়েছে। এছাড়া গো-খাদ্যের সঙ্কটে গবাদী পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছে বানভাসী মানুষরা। যদিও বানভাসী মানুষের মাঝে সরকারি ও বেসকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে নামতে থাকা পানির টানে নদী তীরবর্তী এলাকায় বেড়েছে ভাঙন। অনেক জায়গায় মানুষের বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, জমি-জিরাত, স্থাপনা-সব নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে ওই চার উপজেলার অন্তত ২০টি পয়েন্টে। ইতোমধ্যে এসব এলাকার অনেক বসতবাড়ি, গাছপালা ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের করালগ্রাসে ভিটেমাটি হারিয়েছে ফুলছড়ি উপজেলার পিপুলিয়া, বাগবাড়ী, দেলুয়াবাড়ী, বানিয়াপাড়া ও মধ্য উড়িয়া গ্রামের অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার। এছাড়া সাঘাটার মুন্সিরহাট ক্রসবাঁধ ভেঙ্গে দুই শতাধিক বসতবাড়ি যমুনায় বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বসতভিটা হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে এসব এলাকার গৃহহীন পরিবারগুলো।
জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এসএম ফয়েজ উদ্দিন জানান, বন্যাকবলিত চার উপজেলার মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৬০৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২২ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ১৯ লাখ ও গো-খাদ্য ক্রয়ে ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৬ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য সাড়ে ১৫ লাখ টাকা ও গো-খাদ্যের জন্য ১৬ লাখ টাকা বিতরণের কাজ চলমান রয়েছে।