মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে গাংনী বাসস্ট্যান্ডে ফোর লেনে উন্নীতকরণের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে প্রায় তিন মাস। জেলা পরিষদের যাত্রী ছাউনি ও দোকান অপসারণ করে সংস্কার কাজ চালু করতে স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক গঠিত ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত দল। গতকাল সোমবার দুপুরে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মেহেরপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেনের নেতৃত্বে তদন্ত করা হয়।
জানা গেছে, জেলা পরিষদের যাত্রীছাউনি এবং তার সংলগ্ন দোকান অপসারণ জটিলতা নিয়ে ফোরলেন সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবাদে গেল দুই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। গতকাল সোমবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে পেঁৗঁছানোর আগেই বাজারের ব্যবসায়ীরা ও স্থানীয় লোকজন বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হন। এসময় দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তা গণসমাবেশের রূপ নেয়।
তারা বলেন, সড়ক ও জনপথ একটি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বাসস্ট্যান্ড এলাকা ফোরলেন ও প্রশস্থকরণের কাজ করছে। এ কাজের মধ্যে বাসস্ট্যান্ডে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া ও হাটবোয়ালিয়া সড়কের মিলিতস্থানে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সেলক্ষ্যে দারুণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেখানে থাকবে একটি সার্ভিস লেন। ট্র্যাফিক আইল্যান্ড বা ত্রিভুজ চত্তরের সামনে সার্ভিস লেন দিয়ে সহজে যাতায়াতের নকশা করা আছে। তবে এ নকশা বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগ মেহেরপুর জেলা পরিষদের মালিকানাধীন যাত্রীছাউনি, যাত্রী ছাউনি সংলগ্ন মালেক স্টোর এবং জেলা পরিষদ মার্কেটের কিছু অংশ অপসারণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলোচনা করে আসছে বেশ আগে থেকেই। তবে এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান বিদায়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুস সালাম।
বক্তারা বলেন, আব্দুল মালেক স্টোর জেলা পরিষদ থেকে ভাড়া চুক্তিতে দোকান নিয়েছে। জায়গাটি তাদের মালিকানায় নয়। মামলা করতে হলে এ জায়গার মালিক হিসেবে জেলা পরিষদ মামলা করবে। কিন্তু তারা ভাড়াটিয়া হয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পক্ষান্তরের তারা গাংনীর গণদাবির বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। তাই জনস্বার্থে তাদের উচিত জায়গা ছেড়ে দিয়ে পাশেই তাদের নিজস্ব দোকানে যাওয়া। বাস স্ট্যান্ডে সড়কের পাশেই তাদের নিজস্ব দোকান রয়েছে। এখান থেকে উচ্ছেদ হলে তারা নিজ দোকানে যেতে পারছেন। কিন্তু সেটি না করে তারা গাংনীর মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনরোষের অবতারণা করছেন বলেও অভিযোগ করেন বক্তারা
এদিকে সমাবেশ চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন, গাংন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা একজন প্রতিনিধি, মেহেরপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী, মেহেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহ প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ বিভাগের আরএসডি এবং সদস্য সচিব জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় তারা বাস স্ট্যান্ডের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেন। বিভিন্ন পাশ থেকে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করেন। বাসস্ট্যান্ডের নকশা বাস্তবায়নের অন্তরায় দেখার জন্য তারা উঁচু ভবনে উঠেন।
চলমান সমাবেশের অনুরোধে তদন্ত দলের সদস্যরা সমাবেশ স্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তদন্ত কমিটির প্রধান শামীম হোসেন বলেন, আমরা সরেজমিন তদন্ত করে দ্রুত একটি প্রতিবেদন জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে দাখিল করব। এ প্রতিবেদনে যাত্রীছাউনি ও যাত্রীছাউনি সংলগ্ন দোকানপাট অপসারণের যৌক্তিকতা এবং গণদাবি প্রতিফলিত হবে। জেলা পরিষদের নভেম্বর মাসের সভায় তদন্ত প্রতিবেদন ও সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সরকারি কার্যক্রম বাস্তবায়নে আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী কার্য সম্পন্নের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তদন্ত কমিটির প্রধান।