গত শুক্রবার (২১ জুন) বামন্দী ইউনিয়নের বালিয়াঘাট ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমপাড়া এলাকার প্রেমিক জাহিদ হাসানের বাড়িতে অনশনে বসেন ওই তরুণী।
এদিকে প্রেমিকার অবস্থানের খবর পেয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে প্রেমিক জাহিদ হাসান। ঘটনাটি জানাজানি হলে গ্রামজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনশনরত তরুণীকে দেখতে জাহিদের বাড়িতে হাজার হাজার নারী পুরুষ উৎসুক মানুষ ভিড় জমিয়েছেন।
প্রেমিক জাহিদ হাসান গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের বালিয়াঘাট গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার মহব্বত আলীর ছেলে।
ওই তরুণী মিতা খাতুন গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের করমদি গ্রামের দারেজ উদ্দীনের মেয়ে ও গাংনী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে গত বছর ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে।
মিতা খাতুন জানান, বিগত চার বছর পূর্বে থেকে জাহিদ হাসানের সাথে তার প্রেম চলছিল। জাহিদ হাসানের বাড়ি তার বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে হওয়ায় প্রায় তাদের দুজনের দেখা হতো। মাঝে মাধ্যে রাতেও তাদের দুজনের দেখা সাক্ষাত হতো। জাহিদ হাসান তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিক দিন দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন। তরুণী জানান, এর মধ্যে আমার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এলেও জাহিদ সেই বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। আমাকে না পেলে সে আত্মহত্যা করবে বলেও হুমকী দিতো। অনেকদিন সে মোবাইল ফোনে ভিডিও কল দিয়ে গলাই রশি পেছিয়ে আত্মহত্যারও হুমকি দিয়েছে। গত ২০ জুন তারিখ জাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের বাড়িতে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে যাওয়ার কথা ছিল। আমার পরিবারের লোকজন সব কিছুর আয়োজন করেছিল। কিন্তু হঠাৎ জানানো হয় বিয়ে হবে না। জাহিদের পরিবার থেকে দেখতে যাবেনা। পরে জাহিদ আমাকে ম্যাসেজ দেই তুমি চলে এসো। নাহলে তোমার সাথে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ে দেবে না। তার সেই ম্যাসেজের সাড়া দিতেই আমি আমার পরিবারের সব কিছু ত্যাগ করে তাকে পাওয়ার জন্য চলে এসেছি। আমি জাহিদের বাড়িতে আসার পরপরই তার মা ও পরিবারের অন্য সদস্য মিলে জাহিদকে সরিয়ে রেখেছেন। আমি জাহিদকে না পেলে এই সমাজে মুখ দেখাতে পারবোনা। আমি তার সাথে সংসার পাততে চাই। জাহিদ আমাকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। আমি এখানে চলে আসার পর থেকেই জাহিদ ও তার পরিবারের লোকজন তালবাহানা শুরু করেন। পরে আমি বাধ্য হয়েই বিয়ের দাবি নিয়ে জাহিদের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছি। আমি জাহিদকে না পেলে এই বাড়িতেই আত্মহত্যা করবো।
এদিকে তরুণীর অবস্থানের পর জাহিদ হাসানের বাবা মহব্বত আলী তাকে মেনে নিতে চাইলেও জাহিদের মা জান্নাতুল খাতুন ও তার খালু বামন্দীর আব্দুল রশিদ তালবাহানা করে তাকে বাড়ি থেকে সরিয়ে রেখেছে।
জাহিদের মা জান্নাতুল খাতুন বলেন, এই মেয়ে আমার বাড়িতে আসার পরপরই আমার ছেলে বাড়ি ছেলে পালিয়েছে। আমি এই মেয়েকে মেনে নিতে পারবোনা। তাছাড়া আমার ছেলেই তো এখন পলাতক বিয়ে দেবো কার সাথে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, জাহিদ ও তার বাবা ওই তরুণীকে মেনে নিতে চাইলেও তার মা এবং খালা খালু মেনে নিতে পারছেন না। অবস্থানরত ওই তরুণীর গায়ে আলকুশি দেবে বলেও হুমকী দিয়েছেন আব্দুর রশিদের স্ত্রী জয়নব খাতুন।
বামন্দী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বর) আসাদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে গত তিনদিন এলাকার মানুষ ভীড় জমাচ্ছে ওই বাড়িতে। আমি নিজেও বেশ কয়েকবার গেছি এটি নিয়ে সমাধান করার জন্য। ওই তরুণীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। সে ওই বাড়ি থেকে বের হবেনা। এছাড়া পরিবারের লোকজনকেও বোঝানোর চেষ্টা করেছি বিয়ে দিয়ে দিতে। তারাও মেয়েটিকে মেনে নিচ্ছেন না। তারপরেও আজ সোমবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে সমাধানের জন্য বসা হয়েছে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: তাজুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি শুনার পর ওই তরুণীকে বোঝানোর জন্য আমি নিজে ঘটনাস্থলে গেছি। সে এখন বিয়ে ছাড়া ওখান থেকে উঠবে না। আমিতো তাকে জোর করে কিছু করতে গেলে সে অন্য কোনো কিছু করে ফেললে এই দায় কে নেবে। যে কারনে আমি আপাতত ওই তরুণীর নিরাপত্তার জন্য দুজন নারী পুলিশ কনেস্টবল রেখেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।