শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫

খোকন হত্যা মামলার রায় : ৩ আসামীর মৃত্যুদন্ড

মেহেরপুর শহরের চাঞ্চল্যকর ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালক

নিউজ ডেস্ক:মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজারের ইজিবাইক (অটো) চালক এনায়েত হোসেন খান খোকন হত্যা মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক নুরুল ইসলাম ওই আদেশ দেন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার মৃত্যুদ-াদেশ প্রাপ্ত আসামীরা হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার গোপালপুর মাঝপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩০), রামনগর কলোনিপাড়ার জিন্নাত আলীর ছেলে মামুন হোসেন (২৪) ও একই গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে ওয়াসিম (২৬)। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অপর একটি ধারায় ওই তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদ- এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ২ বছর করে কারাদ- দিয়েছে আদালত।
এ মামলার অপর দুই আসামির ৩ বছর করে কারাদ- এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। এরা হলেন- কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামের খাইবর হোসেনের ছেলে কাবুল ইসলাম (২৭) এবং দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকু-ি গ্রামের সাত্তার আলীর ছেলে ফিরোজ আলী (২৫)।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার এলাকার আব্দুল জলিল খানের ছেলে এনায়েত হোসেন খান খোকন ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর প্রতিদিনের ন্যায় দুপুরের দিকে ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাতে বাড়ি না ফেরায় বাড়ির সকলে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর নিয়ে খুঁজে পায়না। পরদিন সকালে সদর উপজেলার টেংরামারি গ্রামে পাকুড়তলা নামক স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে ইজিবাইকটি পাওয়া যায়না। ওই দিন নিহতের স্ত্রী রোকেয়া আক্তাার রুমা বাদি হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা ও ছিনতাই মামলা করেন। মামলার প্রাথমিক তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সদর থানার এস আই রফিকুল ইসলাম। আসামিরা ইজিবাইক চালক খোকনকে হত্যা শেষে ইজিবাইকটি ছিনতাই করে পালিয়ে যায় বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়।
মামলায় কোন আসামি বা স্বাক্ষীর নাম না থাকলেও তদন্তাকারী কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোন ট্রাকিং করে আসামীদের সনাক্ত করেন। প্রথমে সেই সূত্রে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকু-ি গ্রামের আসামী ফিরোজ আলীকে গ্রেপ্তার করেন। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তী মোতাবেক অন্য আসামিদের আটক করেন। আসামি দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। পরবর্তীতে ওই মামলায় আদালতে ১৭ জন স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। মামলার নথি ও স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য পর্যালোচনা করে বিজ্ঞ বিচারক এই আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে আসামীরা উচ্চ আদালতে আগামী সাত দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর পল্লব ভট্টাচার্য ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শহিদুল হক এবং আসামি পক্ষে শফিকুল আলম আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন। পাবলিক প্রসিকিউটর পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এ রায় এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শহিদুল হক বলেন, দ্রত সময়ের মধ্যে এই মামলার রায় হওয়ায় বাদিপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী শফিকুল আলম বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আমরা আপিল করবো। এদিকে রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্ত্রী রোকেয়া আক্তার রুমা। তিনি বলেন, এ রায় যেন দ্রত কার্যকর হয়। স্বামীকে মেরে ফেলার পর ক্লিনিকে কাজ করে দুই ছেলে-মেয়েকে মানুষ করছি। কোনো আদালতে আপিলে যেন আমার স্বামীর ঘাতকরা পার না পায়।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular