খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা গ্রামের খালের গোড়া নামক স্থানে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ আবারও ভেঙে গেছে। জোড়াতালি দিয়েও বাঁধটির শেষ রক্ষা হলো না। আজ রোববার দুপুরে উচ্চ জোয়ারে বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডে অন্তত ১০টি গ্রাম সাগরের লোনাপানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ১৫ হাজার মানুষ।
গত ১৭ জুলাই ভোরে বাঁধের প্রায় দেড় শ মিটারের মতো ধসে নদীতে বিলীন হয়। দুই দিন পর হাজার হাজার মানুষের সম্মিলিত চেষ্টায় ভাঙা স্থানে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে উচ্চ জোয়ারে ওই রিংবাঁধের ৫০ ফুটের মতো ভেঙে গিয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কয়েক শ মানুষের চেষ্টায় তা মেরামত করা হয়। তবে নদীর পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল শতাধিক মাছের ঘের। সেই বাঁধটি আজ আবার ১০০ মিটারের মতো ভেঙে গেছে।
বারবার একই স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফিলতিকেই দুষছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের দাবি, এক মাস আগে রিংবাঁধ দেওয়া হলেও সেটি রক্ষণাবেক্ষণ বা মজবুত করার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পাউবো। এ কারণে দুর্বল বাঁধ বারবার ভেঙে যাচ্ছে।
বাঁধ ভেঙে চরামুখা গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাড়ির মধ্যে পানি উঠেছে। ডুবে গেছে পুকুরও। একটি ঘরের মধ্যে পানি ঢুকেছে। রফিকুল ইসলাম বলেন, আশপাশের সবার বাড়িতেই কমবেশি পানি উঠেছে। মানুষ গরু-ছাগল উঁচু বাঁধের ওপর রেখে এসেছেন। রাতের জোয়ারে আবার পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সভাপতি মো. আবু সাঈদ খান বলেন, গত ১৭ জুলাই বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অন্তত ১০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছিল। দুই দিন পর রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর পর ওই ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফেরে। এক মাসে অনেকটা ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন সবাই। কিন্তু আবার ভেঙে যাওয়ায় সব বরবাদ হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, বাঁধ না ভাঙলে পাউবোর ঘুম ভাঙে না। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত না করে ভেঙে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির তোড়জোড় শুরু হয়। ততক্ষণে নিঃস্ব হয় সাধারণ মানুষ।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ওসমান গনি বলেন, গতকাল দুপুরের জোয়ারে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর সবার চেষ্টায় আবার তা মেরামত করা হয়। কিন্তু আজ জোয়ারের পানির উচ্চতা এতটাই বেশি ছিল যে ওই বাঁধ আর টিকতে পারেনি। প্রায় ১০০ মিটারের মতো ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। জুলাই মাসে ভেঙে যাওয়ার পর বাঁধ মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি পাউবো। যদি রিংবাঁধে কাজ করা হতো, তাহলে এমনটি হতো না। তিনি আরও বলেন, বাঁধ ভেঙে আজ পানি ঢুকে দক্ষিণ বেদকাশী, চরামুখা, হলুদবুনিয়া, বিনাপানি, পদ্মপুকুরসহ ১০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কাল সোমবার সকালে আবার সবাইকে নিয়ে বাঁধ মেরামতের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ওই এলাকা পড়েছে পাউবোর সাতক্ষীরা বিভাগ-২–এর আওতায়। জানতে চাইলে বিভাগের পরিচলন ও রক্ষণাবেক্ষণের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, প্রথম বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর রিংবাঁধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি মজবুত করা যায়নি। সেখানে মাটির মান খুব বেশি ভালো নয়। তা ছাড়া জোয়ার-ভাটার কারণে বেশি সময় কাজ করা যায় না। এ কারণেই মূলত বাঁধটি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপাতত পানি প্রবেশ বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর রিংবাঁধ মজবুতের চেষ্টা করা হবে।