ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আ. লীগকে বিক্ষোভ করতে দেয়া হবে না: প্রেস সচিব

0
8
আওয়ামী লীগের পতাকাতলে কেউ অবৈধ বিক্ষোভ করার সাহস দেখালে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের প্রচেষ্টাকে সুযোগ দেব না।

আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ডাকা কর্মসূচিকে ঘিরে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, মিত্রবাহিনী কি নাৎসিদের প্রতিবাদ করতে দিয়েছিল?

পোস্টে তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশ কি একদল খুনি এবং দুর্নীতিবাজ চক্রকে আবার ক্ষমতায় আসতে দেবে? কোনো দেশই জবাবদিহিতা ছাড়া স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার অনুমতি দেয় না। বাংলাদেশের জনগণ এই খুনিরা কোনো প্রতিবাদ-সমাবেশ করলে তার বিরুদ্ধে কঠিন জবাব দেবে।

শফিকুল আলম বলেন, যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ এই গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড এবং প্রকাশ্য দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চাইবে এবং যতক্ষণ না তাদের অন্যায়কারী নেতাকর্মীরা বিচার ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের অপরাধের জন্য বিচারকার্যের প্রক্রিয়া শুরু করে পাপমোচন করতে উদ্যোগ না নেবে এবং যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ তাদের বর্তমান নেতৃত্ব ও ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে নিজেকে আলাদা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।

প্রেস সচিব পূর্বের উদাহরণ টেনে বলেন, আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো নায্য বিক্ষোভ বন্ধ বা নিষিদ্ধ করেনি। আমরা সমাবেশ করার স্বাধীনতা এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আজ সকালে গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে পাঁচ মাসে কেবল ঢাকায় কমপক্ষে ১৩৬টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিক্ষোভের ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবুও, সরকার কখনো বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেননি।

কিন্তু আমাদের কি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে বিক্ষোভ করার সুযোগ দেওয়া উচিত? জুলাই-আগস্টের ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় যে আওয়ামী লীগের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যায় অংশ নিয়েছিল। তাদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ হয়েছেন কয়েকশ তরুণ শিক্ষার্থী, এমনকি নাবালক শিশুরাও। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা, খুন ও তাণ্ডবের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার।

গতকাল কয়েকজন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মীর সাক্ষাৎকারের বরাতে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, শেখ হাসিনা তার ১৬ বছরের একনায়কত্বের শাসনামলে সরাসরি হত্যা এবং জোরপূর্বক গুমের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তিনি একটি চোরতন্ত্র (ক্লেপ্টোক্রেসি) এবং খুনি শাসনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিরপেক্ষ ও স্বাধীন একটি প্যানেল বলছে, শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে তার ঘনিষ্ঠরা ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি থেকে কোটি কোটি ডলার চুরির দায়ে হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত চলছে।

এছাড়াও প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন। প্রায় তিন হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শাপলা চত্বরের সমাবেশ এবং মাওলানা সাঈদীর বিচারিক রায়ের পর বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ বাহিনী হাসিনার শাসনামলে পুলিশ লীগে পরিণত হয়েছিল। হাসিনার একনায়কতন্ত্রে প্রায় ষাট লাখ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ভুয়া ও গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। এমনকি দেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতিকেও নির্মমভাবে মারধর করা হয়, পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়, পোস্টে জানান প্রেস সচিব।