আগেও অনেকবার অডিশন দিয়েছেন, কিন্তু পাস করতে পারেননি। ফলে এবার যখন ‘সেভেনআপ মিউজিক্যাল প্রিমিয়ার লীগ’-এ অডিশন দিলেন, কাউকেই আর বললেন না।
মা-বাবাকেও না। এমনকি সংগীতগুরু প্রদীপ রাহাকেও না। প্রতিযোগিতাটির কথা আসাদুর রহমান জেনেছিলেন টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে। নিয়মানুযায়ী প্রথমে অডিশনের জন্য এসএমএস করলেন। পরে ভয়েস রেকর্ডও করে পাঠালেন। ফিরতি এসএমএসে জানতে পারলেন—২৬ জানুয়ারি খুলনা অঞ্চলের প্রতিযোগীদের অডিশন হবে টাইগার গার্ডেনে। সেই সকালে খুলনার শিববাড়ি মোড়ের টাইগার গার্ডেনে গিয়ে দেখেন, সেখানে প্রায় ৩০০ প্রতিযোগী হাজির। তাদের মধ্যে বিজয়ী হয়ে চলে গেলেন দ্বিতীয় রাউন্ডে। এরপর বাড়িতে জানালেন। মা সেকি খুশি।
আসাদ পড়েন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অ্যাগ্রো টেকনোলজির তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্র গানের সঙ্গে আছেন সেই ছোটবেলা থেকে। মা-বাবা দুজনই গান করেন। রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে তাঁর গান শেখার শুরু হলেও আধুনিক গান গাইতেই ভালোবাসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো অনুষ্ঠান ও আয়োজনে গান করেন। খুলনা খঞ্জনির চার সদস্যের একজন হিসেবে ঢাকার গ্র্যান্ড অডিশনে অংশ নিলেন। তাতে তাঁদের দলে আরো ছিলেন—বনি, রাখি ও বিপুল। বনির লেখাপড়া শেষ, রাখি রাজশাহী কলেজে পড়েন। বিপুল ব্যবসায়ী। আসাদই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেই রাউন্ডে তাদের আইকন সিঙ্গার ছিলেন ক্লোজআপ তারকা সাব্বির। তাঁর মতোই গাইতে হবে।
আট বিভাগের প্রতিযোগীদের দুুটি গ্রুপে ভাগ করে গ্র্যান্ড ফাইনাল শুরু হলো। সেখানে ফেস রাউন্ডে তিনি দিনের সেরা পারফরমারও হলেন। তিনি গেয়েছিলেন জেমসের গান ‘আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব’। ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ঢাকা ঢোলক ও খুলনা খঞ্জনি। তুমুল সেই প্রতিযোগিতায় যতটা না তিন বিচারক—পার্থ বড়ুয়া, শাকিলা জাফর ও বাপ্পা মজুমদারের এক্সপ্রেশন, পরামর্শের দিকে খেয়াল রেখেছেন আসাদ, তার চেয়েও অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে তাঁর মায়ের এক্সপ্রেশনগুলো খেয়াল করেছেন। কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল—‘মা সবচেয়ে ভালো বুঝবেন, আমি কোন গানটি কেমন গাইছি। ’ যখন তাঁদের দলকে সেরা ঘোষণা করা হলো, সবাই স্টেজ থেকে নেমে গেলেও তিনি দাঁড়িয়েই ছিলেন। আসলে আসাদ বিশ্বাস করতে পারছিলেন না—শেষ পর্যন্ত তাঁর কপালেও কোনো প্রতিযোগিতার সাফল্যের মালা জুটতে পারে। সে কথাই বললেন তিনি, ‘প্রথমে তো বিশ্বাস হয়নি। পরে মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তাঁর প্রেরণায়ই এত দূর এসেছি। ’
বন্ধুরাও তাঁকে নিয়ে খুব খুশি। সহপাঠী সিজান বললেন, ‘আসাদকে যে পরিমাণ কষ্ট করতে দেখেছি, তাতে আমার বিশ্বাস ছিল—ও পারবে, নিশ্চয়ই পারবে। ’ আর শাশ্বতী বললেন, ‘আমাদের আসাদ খুব ভালো গান করে, ও ক্যাম্পাসের গর্ব। ’
তবে এই সাফল্যের জন্য তাঁকে খেসারতও দিতে হয়েছে। দুটি টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেননি। তিনটি সেশনাল ফাইনাল—মানে প্র্যাকটিক্যাল মিস হয়েছে। তার পরও তিনি গান নিয়ে আছেন। সে কথাই বললেন আসাদ, ‘গানের সঙ্গেই থাকতে চাই আজীবন।