নিউজ ডেস্ক:
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনকে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের উৎস বানিয়েছেন। বলেছেন, কোরআনে রয়েছে ‘সবকিছুর বিবরণ’। গাছপালা, তরুলতা ও উদ্ভিদের বিস্তৃত বিবরণও রয়েছে কোরআনে। উদ্ভিদসংক্রান্ত আয়াতগুলোয় মৌলিকভাবে আলোচিত হয়েছে উদ্ভিদের প্রাণ, তার বংশ বিস্তার, ফুলের পরাগায়ণ, বীজের অঙ্কুরায়ন, ফল পরিপক্ব হওয়া ইত্যাদি বিষয়।
যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিনি সেই সত্তা, যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তা থেকে আমি উৎপন্ন করি সব ধরনের উদ্ভিদ। তা থেকে উদ্গত করি সবুজ পাতা এবং উৎপন্ন করি পরস্পর জড়ানো শস্যদানা এবং খেজুর গাছ, যার শীর্ষদেশ কাঁদির ভারে নুয়ে থাকে। সৃষ্টি করি আঙুর, জলপাই ও আনারের বাগানগুলো, যা পরস্পরের সাদৃশ্যপূর্ণ হয় আবার বৈসাদৃশও হয়। তোমরা লক্ষ করো! যখন গাছ ফলবান হয় এবং ফল পাকতে শুরু করে। নিশ্চয় এগুলোতে রয়েছে মোমিনদের জন্য নিদর্শন।’ (সূরা আনআম : ৯৯)।
এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বিভিন্ন উদ্ভিদের নাম ও শ্রেণী উল্লেখ করেছেন। উদ্ভিদ দিয়ে রেখেছেন কয়েকটি সূরার নামও। তিনি উদ্ভিদের উল্লেখ করেছেন উপমা দিতে, কোনো কিছুর প্রমাণস্বরূপ অথবা নিছক বিবরণ হিসেবেও এসেছে উদ্ভিদের নাম। কোরআনে উল্লিখিত উদ্ভিদগুলো হলো
১. আল ইনাবু : আঙুর ফল। ‘এবং আঙুর ও শাকসবজি।’ (সূরা আবাসা : ২৮)।
২. আর রুম্মান : আনার। ‘সেখানে রয়েছে ফলমূল; খেজুর ও আনার।’ (সূরা রহমান : ৬৮)।
৩. আত তিন : ডুমুর (ফল বা গাছ)। ‘ডুমুর ও জলপাই (বা তার গাছের) এর শপথ।’ (সূরা তিন : ১)।
৪. আন নাখিল : খেজুর গাছ। ‘এবং শস্যক্ষেত ও দুর্বল এবং ঘন গোছাবিশিষ্ট খেজুর বাগানে।’ (সূরা শুয়ারা : ১৪৮)।
৫. আজ-জারউ : বীজ, চারা, শস্য বা শস্যক্ষেত। ‘মহান আল্লাহ, যিনি সৃষ্টি করেছেন নানা ধরনের বাগান। যার কিছু মাচার ওপর বিছানো থাকে (কা-হীন) এবং কিছু মাচার ওপর বিছানো থাকে না (কা-বিশিষ্ট) এবং যিনি সৃষ্টি করেছের খেজুর গাছ ও বিভিন্ন স্বাদের খাদ্যশস্য।’ (সূরা আনআম : ১৪১)।
৬. আর রাতাবু : তাজা ও পাকা খেজুর। ‘তুমি খেজুর গাছের কা- ধরে নাড়া দাও। তোমার ওপর তা ফেলবে পাকা তাজা খেজুর।’ (সূরা মরিয়াম : ২৫)।
৭. আল ফাকিহাতু : যে কোনো ফল। ‘তাতে রয়েছে ফলমূল ও খোসায় ঢাকা খেজুর।’ (সূরা রহমান : ১১)।
৮. আজ জায়তুন : জলপাই। ‘ডুমুর ও জলপাই (বা তার গাছের) এর শপথ।’ (সূরা তিন : ১)।
৯. আস সামারু : যে কোনো ফল। ‘খেজুর ও আঙুর ফলগুলো। তা থেকে তোমরা গ্রহণ করো নেশাদ্রব্য ও উত্তম রিজিক।’ (সূরা নাহল : ৬৭)।
১০. আল ইয়াকতিন : লাউ বা কদু। ‘আমি তার ওপর একটি লাউ গাছ উদ্গত করলাম।’ (সূরা সাফফাত : ৪৬)।
১১. আস সিদরু : কুল বা বরই গাছ। ‘কাঁটাবিহীন বরই গাছ তলায়।’ (সূরা ওয়াকিয়া : ২৮)।
১২. আল আসলু : ঝাউ গাছ। ‘আমি তাদের বাগান দুইটিকে এমন দুই বাগানে পরিবর্তন করলাম, যেখানে রইল কিছু বিস্বাদ ফল, ঝাউ গাছ ও কুল গাছ।’ (সূরা সাবা : ১৬)।
১৩. আল খামতু : তেঁতো ও বিস্বাদ খাবার বা আরবি ভাষায় ‘আরাক’ নামক বিশেষ লতা গাছ। ‘আমি তাদের বাগান দুইটিকে এমন দুই বাগানে পরিবর্তন করলাম, যেখানে রইল কিছু বিস্বাদ ফল, ঝাউ গাছ ও কুল গাছ।’ (সূরা সাবা : ১৬)।
১৪. আল আব্বু : পশুখাদ্য। গৃহপালিত ও বন্যপশু যে ফল খায়। ‘তাতে উৎপন্ন করেছি ফলমূল ও ঘাস।’ (সূরা আবাসা : ৩১)।
১৫. আল কিসসাউ : শসা। ‘তারা বলল, তুমি তোমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো। যেন তিনি আমাদের জন্য ভূমিজাত খাদ্যদ্রব্যÑ তরকারি, শসা, গম, মসুর ও পেঁয়াজ উৎপন্ন করেন।’ (সূরা বাকারা : ৬১)।
১৬. আল ফুমু : মটরকলাই বা গম। ‘তারা বলল, তুমি তোমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো। যেন তিনি আমাদের জন্য ভূমিজাত খাদ্যদ্রব্য তরকারি, শসা, গম, মসুর ও পেঁয়াজ উৎপন্ন করেন।’ (সূরা বাকারা : ৬১)।
১৭. আল বাকলু : সবজি বা যে কোনো উদ্ভিদ। ‘তারা বলল, তুমি তোমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো। যেন তিনি আমাদের জন্য ভূমিজাত খাদ্যদ্রব্য তরকারি, শসা, গম, মসুর ও পেঁয়াজ উৎপন্ন করেন।’ (সূরা বাকারা : ৬১)।
১৮. আল আদাসু : ডাল। ‘তারা বলল, তুমি তোমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো। যেন তিনি আমাদের জন্য ভূমিজাত খাদ্যদ্রব্যÑ তরকারি, শসা, গম, মসুর ও পেঁয়াজ উৎপন্ন করেন।’ (সূরা বাকারা : ৬১)।
১৯. আল বাসালু : পেঁয়াজ। ‘তারা বলল, তুমি তোমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো। যেন তিনি আমাদের জন্য ভূমিজাত খাদ্যদ্রব্যÑ তরকারি, শসা, গম, মসুর ও পেঁয়াজ উৎপন্ন করেন।’ (সূরা বাকারা : ৬১)।
২০. আল হাব্বু : শস্যদানা বা বীজ। ‘নিশ্চয় আল্লাহ বীজ ও আঁটিকে অঙ্কুরিত করেন।’ (সূরা আনআম : ৯৫)।
২১. আস সানাবিলু : শিষ বা মুকুল। ‘যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের দৃষ্টান্ত হলো বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শিষ বের হয় এবং প্রত্যেক শিষে থাকে ১০০ বীজ।’ (সূরা বাকারা : ২৬১)।
২২. আন নাবাতু : উদ্ভিদ। ‘যেন আমি তা (পানি) দিয়ে উৎপন্ন করি শস্যদানা ও উদ্ভিদ।’ (সূরা নাবা : ১৫)।
২৩. আর রায়হানু : পুদিনা জাতীয় এক ধরনের গুল্ম বা যে কোনো সুগন্ধ গুল্ম। ‘আরও রয়েছে ভূষিযুক্ত শস্যদানা ও সুগন্ধি ফল।’ (সূরা রহমান : ১২)।
২৪. আজ জানজাবিলু : আদা বা এক ধরনের মূল্যবান সুগন্ধি। ‘তারা সেখানে এমন শূরা পান করবে, যাতে মেশানো থাকবে জানজাবিল’। (সূরা দাহর : ১৭)।
২৫. আল কাদবু : পুষ্টিকর শাকসবজি। ‘আঙুরের থোকা এবং রকমারি শাকসবজি।’
২৬. আল কাফুরু : কর্পূর। ‘নিশ্চয় সৎ মানুষ জান্নাতে এমন পাত্রে পান করবে, যাতে মেশানো থাকবে কর্পূর।’ (সূরা দাহর : ৫)।
২৭. আজ জাক্কুমু : কাঁটাযুক্ত গাছ বা ক্যাকটাস। ‘আপ্যায়নের জন্য এটাই উত্তম না কাঁটাযুক্ত গাছ?’ (সূরা সাফফাত : ৬২)।
২৮. আন নাজমু : ঘাস বা এমন গাছ, যার ডাল হয় না। ‘লতাপাতা ও বৃক্ষরাজি তাঁকে সিজদা করে।’ (সূরা রহমান : ৬)।
২৯. আস সাজারু : ডালবিশিষ্ট গাছ। ‘লতাপাতা ও বৃক্ষরাজি তাঁকে সিজদা করে।’ (সূরা রহমান : ৬)।
৩০. আল কিনওয়ানু : খেঁজুরের কাঁদি। ‘এবং খেজুর গাছ, যার শীর্ষদেশ কাঁদির ভারে নুয়ে থাকে।’ (সূরা আনআম : ৯৯)।
৩১. আত তালউ : খেঁজুর গাছের শিষ। ‘এবং খেজুর গাছ, যার শীর্ষদেশ কাঁদির ভারে নুয়ে থাকে।’ (সূরা আনআম : ৯৯)।