শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫
শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫

কোরআনে বর্ণিত আর রাস-এর অধিবাসী যারা

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর একটি ‘আসহাবুর রাস’। আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার কারণে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি ধ্বংস করেছিলাম আদ, সামুদ ও রাস-এর অধিবাসীকে এবং তাদের অন্তর্বর্তীকালের বহু সম্প্রদায়কেও। আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছিলাম, আর তাদের সবাইকেই আমি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিলাম।’ (সুরা ফোরকান, আয়াত : ৩৮-৩৯)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের আগেও সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল নুহের সম্প্রদায়, রাস্স ও সামুদ সম্প্রদায়, আদ ফিরাউন ও লুত সম্প্রদায় এবং আয়কার অধিবাসী ও তুব্বা সম্প্রদায়; তারা সবাই রাসুলদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, ফলে তাদের ওপর আমার শাস্তি আপতিত হয়েছে।’ (সুরা কাফ, আয়াত : ১২-১৪)

আসহাবুর রাসেসর পরিচয়

পবিত্র কোরআনে রাসেসর অধিবাসীদের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই বর্ণনা করা হয়নি। শুধু এতটুকু বলা হয়েছে যে, তারা ছিল আল্লাহর অবাধ্য এক জাতি। ফলে তাদের পরিচয় নির্ধারণে পরবর্তী যুগের গবেষকদের ভেতর মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। কোরআনের ব্যাখ্যাকাররা এই বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, রাস্স অর্থ পানির কূপ। তাই তারা কূপের অর্থটি ধারণ করে বিভিন্ন স্থানকে আসহাবুর রাসেসর আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াস পেয়েছেন।

কোথায় ছিল তাদের আবাস

আসহাবুর রাসেসর আবাসস্থল নিয়ে প্রসিদ্ধ কয়েকটি মতামত তুলে ধরা হলো—

১. আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, রাস্স ছিল প্রাচীন আরবের ইয়ামামা অঞ্চলের একটি অঞ্চল। বর্তমানে তা ওয়াদিউর রুম নামে পরিচিত। এই অঞ্চলের মানুষ তাদের কাছে প্রেরিত নবীকে কূপে আটকে রেখেছিল বলে তাদেরকে আসহাবুর রাস্স নামে অবহিত করা হয়। তাদের কাছে প্রেরিত নবীর নাম ছিল হানজালা ইবনে সিফওয়ান (আ.)।

২. একদল গবেষকের মতে, রাসেসর অধিবাসীরা আধুনিক আজারবাইজান অঞ্চলে বসবাস করে। আর রাস্স অর্থ জলাশয়, যার দ্বারা আরাস নদী উদ্দেশ্য। আরাস নদী তুরস্ক, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে প্রবাহিত।

৩. অন্য একদল গবেষকের মতে, আসহাবুর রাস্স ছিল সিন্ধু সভ্যতার অংশ। কেননা সিন্ধু সভ্যতায় বিপুল সংখ্যক কূপের সন্ধান পাওয়া যায়। আধুনিক পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত প্রাচীন নগরী মহেঞ্জোডারোতে সাত শ কূপ ছিল এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের প্রাচীন নগরী হারাপ্পাতে তিন শ কূপ ছিল। এছাড়াও প্রাচীন আরবের ঐতিহাসিক সূত্রগুলো সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের আসহাবুর রাস্স নামে উল্লেখ করেছে।

৪. কারো কারো মতে, রাস্স শব্দ থেকে রুশ শব্দের উত্পত্তি এবং রুশ থেকে রাশিয়ার উদ্ভব। তাই রাসেসর অধিবাসী দ্বারা রাশিয়ার কোনো জনগোষ্ঠিকে বোঝানো হয়েছে।

৫. আল্লামা ইবনে জারির তাবারি (রহ.) বলেছেন, রাসেসর অধিবাসীরা ছিল সামুদ জাতিরই একটি শাখা গোষ্ঠি। তারা সামুদ জনপদের একটি গ্রামে বসবাস করত। তাদের কাছে হুজলাহ ইবনে সাফওয়ান (আ.) নামে একজন নবীকে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা তাঁকে অস্বীকার করে এবং হত্যা করে। হত্যার পর তারা তাঁর দেহ কূপে নিক্ষেপ করে।

আসহাবুর রাসেসর পাপের বর্ণনা

ঐতিহাসিক আবু বকর মুহাম্মদ বিন হাসসান হাদরামি লেখেন, রাসেসর বাসিন্দাদের পান করার এবং তাদের কৃষি ভূমির জন্য পর্যাপ্ত পানির সরবারহ ছিল। তারা কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করত। তাদের একজন ন্যায়পরায়ণ ও সদালাপী বাদশাহ ছিল। যখন তিনি মারা যান, তখন তারা তাঁর জন্য খুবই শোকাহত হলো। চার দিন পর শয়তান তার রূপ ধারণ করে বলল, ‘আমি মৃত ছিলাম না, কিন্তু তোমাদের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য আমি তোমাদের কাছ থেকে অনুপস্থিত ছিলাম।’ এতে তারা খুব খুশি হয়। শয়তান তার ও তাদের মধ্যে একটি পর্দা স্থাপন করার নির্দেশ দেয় এবং দাবি করে, সে কখনো মারা যাবে না। জনসাধারণের অনেকেই তাকে বিশ্বাস করে। তারা মুগ্ধ হয়ে তার উপাসনা শুরু করে। তারপর আল্লাহ তাদের কাছে একজন নবী পাঠান। নবী তাদেরকে সতর্ক করে বলেন, পর্দার আড়াল থেকে কেবল শয়তানই তাদের সঙ্গে কথা বলে। তিনি তাদেরকে শয়তানের উপাসনা করতে নিষেধ করেন। তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন ও তাঁর ইবাদত করার আহ্বান জানান। কিন্তু তারা তাদের নবীকে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহ একটি কূপে ফেলে দেয়। এর শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাদেরকে এবং তাদের জনপদ ধ্বংস করে দেন।

তথ্যঋণ : কাসাসুল আম্বিয়া, তাফসিরে ইবনে কাসির, (বঙ্গানুবাদ) আল কোরআনুল কারীম, ইসলামিক স্টোরিজ ডটকম ও উইকিপিডিয়া

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular