কেউ উপকার করলে তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা ঈমানের দাবি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮১১)
তথাপি কোরআনের ভাষ্য মতে, বেশির ভাগ মানুষ অকৃতজ্ঞ হয়। মানবজাতির মধ্যে অকৃতজ্ঞতার প্রবণতা খুব বেশি। অতএব, আপনি যখন দেখবেন যে অন্যরা আপনার করুণা ভুলে যাচ্ছে ও আপনার সদয় আচরণকে অবজ্ঞা করছে, তখন হতাশ হবেন না। কিছু মানুষ আপনার অনুগ্রহের সমতুল্য ক্ষতি করতে পারে। কোরআনে এসেছে, ‘….আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নিজ অনুগ্রহে তাদের সম্পদশালী করেছিলেন, শুধু এ কারণ ছাড়া তারা বিরোধিতা করার অন্য কোনো কারণ খুঁজে পায়নি।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৭৪)
ইতিহাসের পাতায় এমন ঘটনা সর্বাচেয়ে বেশি ঘটে পিতা-পুত্রের বেলায়। পিতা তাঁর পুত্রকে বড় করে তোলেন, প্রতিষ্ঠিত করেন, পুত্রের মুখে খাবার তুলে দেন, পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করেন এবং তাকে উত্তম শিক্ষা দেন। পিতা রাতের পর রাত বিনিদ্র অবস্থায় কাটান, যাতে করে তাঁর পুত্র আরামে ঘুমোতে পারে। পুত্রের খাবারের জন্য নিজে না খেয়ে থাকেন এবং পুত্রের আরামের জন্য নিজে কঠোর পরিশ্রম করেন। আর যখন ছেলে বড় হয় এবং তখন পিতাকে অবাধ্যতা, অসম্মান ও অবজ্ঞার মাধ্যমে পুরস্কৃত করে!
সুতরাং আপনি যে ভালো কাজ করেছেন তার বিনিময় যদি আপনাকে অকৃতজ্ঞতার মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাহলে আপনি শান্ত থাকুন। কেননা মানুষ অকৃতজ্ঞতাপ্রবণ।
অনেকেই অন্যের অকৃতজ্ঞতায় মর্মাহত হন, যেন তারা কখনো নিম্নোক্ত আয়াত শুনেনি। কোরআন বলছে, ‘আর যখন মানুষকে কোনো বিপদ পেয়ে বসে তখন সে শুয়ে, বসে ও দাঁড়ানো অবস্থায় আমার কাছে আকুল আবেদন করে, কিন্তু আমি যখন তার থেকে মসিবত দূর করে দিই, তখন সে এমনভাবে চলে—যেন কখনো তার ওপর আপতিত মসিবতের জন্য আমার কাছে প্রার্থনা করেনি।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ১২)
তাই যদি আপনি কাউকে উপহারস্বরূপ একটি কলম দেন আর সে এটা দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে লেখে, অথবা আপনি যদি কাউকে ভর দেওয়ার জন্য একটি লাঠি দেন আর সে এ লাঠি দিয়ে আপনাকে প্রহার করে, তাহলে আপনি রাগাম্বিত হবেন না। কেননা বেশির ভাগ মানুষ তাদের রবের প্রতিই অকৃতজ্ঞ। সুতরাং আপনি ও আমি কী ধরনের আচরণ আশা করতে পারি?