নিউজ ডেস্ক:
আপনি সবার কাছ থেকে অসংখ্যবার শুনে থাকবেন যে, তারা আপনাকে ফল (এবং সবজি) খেতে বলে থাকে কারণ সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মত ফল খাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন যে, ফলের মাধ্যমে কি পরিমান সুগার ক্রমাগত খাওয়া হচ্ছে?
ফলের মধ্যে সুগারের পরিমান বেশি (অন্তত কিছু ফলে)। কিন্তু এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই এবং খাদ্য তালিকা থেকে ফল বাদ দিতে হবে না।
তবে পরবর্তীতে যখন আপনি আপনার খাবারের তালিকা থেকে চিনি জাতীয় খাবার কমাবেন তখন খাবারের তালিকায় বেশি পরিমাণ ফল রাখা ডায়েটে সেরা সমাধান হতে পারে না। এটা সত্যি যে, ফল-এ প্রাকৃতিক চিনি থাকে যেখানে অন্যান্য খাবারে সাধারণত পরিশোধিত চিনি বিদ্যমান। কিন্তু তারপরও ফল আপনার চিনি খাওয়াতে অবদান রাখে- ফল খাওয়া অব্যাহত রাখুন, কিন্তু হয়তো অনেক বেশি না।
এ প্রতিবেদনে আপনার পছন্দসই ফলের মধ্যে বিদ্যমান প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ তুলে ধরা হলো।
আঙুর
কে জানে যে, ছোট্ট এই ফলে এত বেশি পরিমান সুগার? এক কাপ পরিমাণ আঙুর খাওয়া মানে ২৩ গ্রাম সুগার খাওয়া। কিন্তু আঙুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো এত ধরনের উপকারিতা প্রদান করে যে, খাদ্য তালিকা থেকে আঙুর বাদ দেওয়া কঠিন। তাই কি পরিমান খাচ্ছেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
চেরি
চেরি ফলে প্রচুর ফাইবার এবং ভিটামিন সি রয়েছে, তাই এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, মাত্র এক কাপ পরিমান এই সুস্বাদু ফলে ২০ গ্রাম সুগার রয়েছে। আপনাকে চেরি না খাওয়ার কথা বলছি না বরঞ্চ পরিমাণ কমানোর কথা বলছি।
আপেল
আপনার অভিভাবক সম্ভবত আপনাকে অসংখ্যবার একথা বলেছে যে, প্রতিদিন একটি আপেল ডাক্তার থেকে দূরে রাখে। কিন্তু এটা হয়তো বলেনি যে, একটি মাঝারি আকারের আপেলে ১৯ গ্রাম সুগার থাকে। আপেলের ইতিবাচক দিক হচ্ছে, আপেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডায়েটি ফাইবারের একটি বড় উৎস। এসব ফাইবার নিশ্চিত করে যে, রক্তে সুগার ধীরে ধীরে শোষিত হবে, শক্তির একটি স্থির উৎস প্রদান করবে। তাই আপেলের সুগার নিয়ে ভয় পেয়ে দূরে রাখার কোনো কারণ নেই।
আনারস
এক কাপ পরিমান আনারসে ১৬ গ্রাম সুগার থাকে। তবে সুগারের এই পরিমানটা আনারস থেকে আপনাকে দূরে রাখতে যথেষ্ট নয়। কারণ এই ফলে পর্যাপ্ত ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন সি রয়েছে। এর এই ভালো দিকগুলো এর খারাপ দিকটিকে অতিক্রম করার জন্য যথেষ্ট।
ব্লুবেরি
ব্লুবেরি ফলে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং ফাইবার রয়েছে। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে, ছোট এক কাপ পরিমান ব্লুবেরিতে ১৫ গ্রাম সুগার রয়েছে। যেহেতু স্ন্যাকস হিসেবে ব্লুবেরি খুবই সুস্বাদু, তাই বেশি খাওয়ার সম্ভাবনা থাকেই। তাই সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে ব্লুবেরির স্ন্যাকসের পরিমাণের ওপর নজর রাখুন।
কলা
এ তথ্য আপনাকে হয়তো চমকে দেবে, কিন্তু সত্যি সত্যিই একটি কলা ১৪ গ্রাম সুগারযুক্ত। এটা শোনার পর নিশ্চয় আপনি আপনার কলা খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে প্রস্তুত হয়ে যাবেন। কিন্তু তার আগে কলার অন্যান্য উপকারিতা উপাদানগুলোর কথাও ভাবুন। যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফাইবারের মতো উপাদান রয়েছে এতে। এছাড়া ব্যায়াম পরবর্তী পেশীর টান লাগা্ প্রতিরোধ করে।
কমলা
একটি কমলায় ১৩ গ্রাম সুগার থাকে। যা হোক, কমলার উপকারিতার দিকে নজর দেওয়া যাক। শরীরের জন্য এটি খুবই উপকারী একটি ফল। ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং পটাসিয়ামের একটি বড় উৎস কমলা। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে কমলা। আপনি নিশ্চিতভাবেই এসব পুষ্টির উপকারিতা থেকে বঞ্চিত থাকতে চান না কিন্তু মনে রাখতে হবে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে খাওয়াটা ভালো ধারণা নয়।
পিচ
গ্রীষ্মকালীন ফল পিচ এবং মাঝারি আকারের একটি পিচ ফল এ ১৩ গ্রাম পরিমাণ সুগার থাকে। হয়তো এ কারণেই এই ফল এত মিষ্টি। পিচ ফল ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসের একটি বড় উৎস। তাই গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে এটিকে উপভোগ করুন।
তরমুজ
গ্রীষ্মকালীন সেরা একটি ফল হচ্ছে, তরমুজ। স্বাদ এবং সুগারে এটি এই তালিকার অন্যান্য ফলের কাজে পরাজিত হলেও আপনার জন্য লাভজনক। এক কাপ তরমুজে ৯ গ্রাম সুগার থাকে (এই তালিকার অন্যান্য ফলের তুলনায় তাই খারাপ নয়)। তরমুজের ৯২ শতাংশ পানি হলেও এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে। তাই খাদ্য তালিকায় রাখুন তরমুজ।
স্ট্রবেরি
৭ গ্রাম পরিমাণ সুগার থাকে এক কাপ স্ট্রবেরিতে। এটা অনেক বেশি মনে হতে পারে কিন্তু তালিকার অন্যান্য ফলের তুলনায় বেশি নয়। স্ট্রবেরিতে ফলিক, ভিটামিন সি, ফাইবার এবং পটাসিয়াম রয়েছে- যা সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের প্রয়োজন হয়।
রাস্পবেরি
এক কাপ রাস্পবেরির মধ্যে মাত্র ৫ গ্রাম পরিমান সুগার থাকে। যা বেশি নয়। এই ফল শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসে ভরপুর, তাই সকালে রেস্পবেরির আরো এক কাপ স্মুদি রাখতেই পারেন।
প্যাকেটজাত খাবার ও ট্রিটের তুলনায় এসব ফল খুবই স্বাস্থ্যকর। তাই প্রাকৃতিক সুগার বেশি থাকলেও এসব ফল খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন। আপনার পছন্দের ফল খাওয়া বন্ধ করবেন না বরঞ্চ খেয়াল রাখবেন তা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়। আপনার শরীরে দৈনিক শর্করার যে চাহিদা সেটার মধ্যে ভারসাম্য রাখাটা নিশ্চিত করুন।
তথ্যসূত্র : ইনসাইডার