নিউজ ডেস্ক:
নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে সরকারি কেনাকাটার প্রবণতা বাড়ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন কেনাকাটায় দরপত্র বা ক্রয়প্রস্তাব দলিল অনুযায়ী কোনো কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করছে না। এর ফলে একদিকে অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আদর্শ দরপত্র দলিল মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) থেকে গত সপ্তাহে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এই পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, পাবলিক প্রকিউরমেনট আইন ২০০৬-এর ধারা ১২ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি-৪ অনুযায়ী সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে সিপিটিইউ কর্তৃক প্রণীত আদর্শ দরপত্র বা প্রস্তাব দলিল ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোনো কোনো ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সিপিটিইউ কর্তৃক প্রণীত আদর্শ দরপত্র বা প্রস্তাব দলিল ব্যবহার করছে না। ফলে একদিকে যেমন ক্রয়প্রক্রিয়া বিধিসম্মত হচ্ছে না, অপরদিকে ক্রয়কারী ও সরবরাহকারী, ঠিকারদার, পরামর্শকের সঙ্গে উভয়ের অধিকার ও দায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া ছাড়াই চুক্তি সম্পাদিত হচ্ছে। উপরন্তু বিধিসম্মতভাবে দরপত্র দাখিল, দরদাতার যোগ্যতা ও মূল্যায়ন নির্ণায়ক নির্ধারণ, দরপত্র মূল্যায়ন ইত্যাদি প্রক্রিয়াও নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে না।
সরকারি ক্রয় বিধিমালায় বলা হয়েছে, একটি আদর্শ দরপত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আবেদনপত্র বা দরপত্র প্রস্তুত ও তা দাখিল সংক্রান্ত নির্দেশনা। আবেদনপত্র বা দরপত্র গ্রহণের সর্বশেষ সময়সীমা ও স্থান। দরপত্র গ্রহণ ও প্রকশ্যে উন্মুক্তকরণের তারিখ, সময় (স্থানীয়) ও স্থান সম্পর্কিত তথ্য। দরপত্র দাখিল শিট এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, দরপত্র জামানত, কার্যসম্পাদান জামানত এবং উৎপাদনকারী কর্তৃক প্রদত্ত অধিকারপত্র। আবেদনপত্র বা দরপত্রের কত কপি মূল কপির সঙ্গে দাখিল করতে হবে তার সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। চুক্তির সাধারণ ও বিশেষ শর্তাদি, চাহিদাপত্র পণ্য বা কাজের বিস্তারিত বিবরণ।
এছাড়াও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক মূল্যায়ন-উত্তর যোগ্যতা প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে দরপত্রদাতা কর্তৃক যোগ্যতার সমর্থনে প্রামাণিক তথ্য থাকতে হবে। যে মেয়াদের জন্য দরপত্র বৈধ থাকবে সেই মেয়াদ উল্লেখ থাকতে হবে। দরপত্র আইনের ধারা ৬৪ বর্ণিত কোনো দুর্নীতি, প্রতারণা, চক্রান্ত বা জবরদস্তিমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হবে না মর্মে দরপত্র দলিলে নির্দেশিত ফরমে অঙ্গীকার প্রদানবিষয়ক একটি শর্ত থাকতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ক্রয়কারী দরপত্র বা প্রস্তাবে বেশ কয়েকটি তথ্য ও শর্তাদি উল্লেখ থাকতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সম্পাদিতব্য কার্য ও ভৌত সেবার বিবরণ। কাজের অবস্থান এবং নকশা। প্রদেয় পণ্য ও সংশ্লিষ্ট সেবার বিবরণ, সরবরাহ বা স্থাপনের স্থান, সরবরাহ এবং কার্যসম্পাদনের কর্মপরিকল্পনা, কার্যসম্পাদনে অবশ্যই করণীয় ন্যূনতম শর্ত, চুক্তিমূল্য প্রভৃতি। কিন্তু অনেক দিন ধরে কয়েকটি ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আদর্শ দরপত্রে এগুলোর অনেকগুলোই উল্লেখ থাকছে না যা ক্রয়নীতি বিধিমালা লঙ্ঘনের শামিল। এতে একদিকে টেন্ডার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্নীতিকেও প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সজাগ দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।