নিউজ ডেস্ক:
জুহাইর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের ক্ষেতখামার কীরূপে চাষ করো? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমরা নালার পাশের জমি নির্দিষ্ট পরিমাণ শুকনো খেজুর অথবা বার্লির বিনিময়ে ইজারা দিয়ে থাকি। (এটি তাদের জন্য খুবই লাভজনক ছিল)। তিনি বললেন, এরূপ করো না। রাসুল (সা.) নির্দেশ দেয়ার পর সাহাবিরা দ্রুত তা পালন করতেন
কেয়ামতের ময়দানে প্রত্যেককে পাঁচটি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কীভাবে আপনি জীবিকা উপার্জন করেছেন। তাই জীবিকা উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারাম বেছে চলতে হবে। বর্তমানে বহু পেশা রয়েছে। এর মধ্যে কৃষি আদি পেশা। জমিন থেকে রিজিক অনুসন্ধান করা উচিত। আল্লাহ আমাদের জন্য জমিনকে অনুগত করেছেন। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন। কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ (সূরা আল মুলক : ১৫)।
অনাবাদি জমি চাষের প্রতি রাসুল (সা.) বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। বোখারিতে বর্ণিত, ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রা.) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো জমি আবাদ করে, যা কারও মালিকানায় নয়, তাহলে সে-ই (মালিক হওয়ার) বেশি হকদার।’ উরওয়া (রহ.) বলেন, ওমর (রা.) তার খেলাফতকালে এরূপ ফয়সালা দিয়েছিলেন। কুফার অনাবাদি জমি সম্পর্কে আলী (রা.) এর মত ছিল, আবাদকারী তার মালিক হবে।
নবীজি ‘হাকুল’ থেকে তার সাহাবিদের বিরত থাকতে বলেছেন। ‘হাকুল’ হচ্ছে জমি ভাড়ায় চাষ করতে দেয়া। পতিত জমি ২ বা ৩ বছরের জন্য বিক্রি করতে (ভাড়ায় দিতে) নিষেধ করেছেন। কারও অতিরিক্ত জমি থাকলে সে তা অন্য ভাইকে ভাগে চাষের জন্য দিতে পারেন। যে ফসল উৎপাদিত হবে, তা সমান সমান ভাগ নিতে পারে।
উভয়ের সম্মতিতে বর্গা চাষ করা বৈধ। তবে ফসল ওঠার আগে ভাগ নির্ধারণ করা যাবে না। মদিনাবাসী গরিব কৃষককে ভাগে জমিন চাষ করতে দিতেন। এ ব্যবস্থায় জমির একটি নির্দিষ্ট অংশ জমির মালিকের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা হতো। কখনও এক অংশের ওপর দুর্যোগ আসত অন্য অংশ নিরাপদ থাকত। রাসুল (সা.) এরূপ করতে নিষেধ করেন। (বোখারি)।
তবে বর্গা চাষ ছাড়াই যদি সওয়াবের আশায় তাকে এমনিতে চাষের জন্য জমি দেয়া হয়, তাহলে সেটি অতি উত্তম। কৃষকের কাজে সহযোগিতা করা কিষানির কর্তব্য। আসমা বিনতে আবু বকরের ঘটনা সহি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তিনি পারিবারিক প্রয়োজনে ঘোড়ার ঘাস সংগ্রহ করতেন। ঘোড়া মাঠে চরাতেন, খেজুরের আঁটি অনতেন, পানি খাওয়াতেন এবং রুটি বানাতেন। স্বামীর জমি থেকে মাথায় করে প্রায় এক মাইল দূরত্ব থেকে শস্য আনতেন।
কৃষক অনেক সময় জমি ইজারা দিয়ে থাকেন। এ সম্পর্কে প্রত্যেকের ধারণা স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। হানজালা ইবনে কায়েস থেকে বর্ণিত। তিনি রফে ইবনে খাদিজাকে জমি ইজারা দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) জমি কেরায়া দিতে নিষেধ করেছেন। ইজারা বা কেরায়া সম্পর্কে কৃষকের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। জুহাইর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের ক্ষেতখামার কীরূপে চাষ করো? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমরা নালার পাশের জমি নির্দিষ্ট পরিমাণ শুকনো খেজুর অথবা বার্লির বিনিময়ে ইজারা দিয়ে থাকি। (এটি তাদের জন্য খুবই লাভজনক ছিল)। তিনি বললেন, এরূপ করো না।
রাসুল (সা.) নির্দেশ দেয়ার পর সাহাবিরা দ্রুত তা পালন করতেন। ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, আমরা আমাদের জমি ভাড়া দিতাম। পরে যখন আমরা রাফে ইবনে খাদিজা (রা.) এর হাদিস শুনতে পেলাম, তখন তা পরিত্যাগ করলাম (মুসলিম)। অতিরিক্ত সম্পত্তি থাকলে সবটুকু হয়তো চাষ করা সম্ভব হয় না।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছেÑ ‘যার কাছে অতিরিক্ত জমি আছে, অন্য মুসলিম ভাইকে তা দিতে রাসুল (সা.) উৎসাহ দিতেন। উদ্বৃত্ত জমি কিরায়া করতে নিষেধ করতেন। পানি সেচের ব্যপারে সমস্যা হলে এক সাহাবিকে নবীজি বলেন, ‘হে জুবাইর, তুমি নিজের জমিতে সেচ দাও, এর পর পানি আটকে রাখ, যাতে তা বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে।’ জমি নিয়ে বিরোধ ঘটলে কেউ কেউ মিথ্যার আশ্রয় নেন, মিথ্যা কসম করেন। এটি খুবই ক্ষতিকর।
একজন ধনী কৃষককে ফসলের জাকাত বা ওশর আদায় করতে হবে। একজন কৃষকের জন্য নেসাব পরিমাণ ফসল থাকলে শস্য, ফলমূল, নগদ টাকা-পয়সা ও মুক্তভাবে বিচরণশীল চতুষ্পদ জন্তুর মতো বর্ধনশীল সম্পদের মধ্য যেভাবে নবি (সা.) জাকাতের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ গ্রহণ করা হবে, তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন । উদাহরণস্বরূপ, উৎপাদন-উপকরণ সরবরাহ করা বা না করার বিবেচনায় শস্য, ফলমূল ও জমি থেকে উৎপন্ন ফসলে জাকাত হিসেবে উৎপাদিত ফসলের এক-দশমাংশ (ওশর) অথবা ২০ ভাগের এক ভাগ গ্রহণ করা হবে।
ঝাড়াই-মাড়াই শেষে যখন ফসল ঘরে উঠবে, তখন তা থেকে ওশর আদায় করতে হবে। প্রতিবার শস্য ওঠার পর নেসাব পূর্ণ হলে ওশর দিতে হবে। নেসাব হচ্ছে ২৮ মণ। কৃষক হাল চাষ বাদে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পশু পালন করেন।
এক্ষেত্রে ৪০টি ছাগলের জন্য একটি ছাগল, পাঁচটি উটের জন্য একটি ছাগল জাকাত হিসেবে দিতে হবে। আল্লাহর ওপর ভরসা করে কৃষিকাজ করতে হবে। অন্য কারও ওপর ভরসা করা যাবে না।
আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদের আকাশ ও জমিন থেকে জীবিকা প্রদান করে! প্রকৃতপক্ষে অল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মাবুদ নেই।’ (সূরা ফাতির : ৩)।