মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত চার দিনের এই আসর চলে।
মেলায় খাদ্য ও পানীয়, মডেস্ট ফ্যাশন, ই-কর্মাস, ইসলামিক ফিন্যান্স ও ফিনটেকসহ মোট ১৫টি ক্লাস্টারে এক হাজারের বেশি বুথের মাধ্যমে বিশ্বের ৪৫টি দেশ এ মেলায় অংশ নিয়েছে। মালয়েশিয়ার মিনিস্ট্রি অব ইনভেস্টমেন্ট, ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং মালয়েশিয়া এক্সটারনাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (মেট্রেড) এ মেলার আয়োজন করে।
এই মেলায় মালয়েশিয়ার হালাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বারাহাদ (এইচডিসি) জিইসি ডেভেলপমেন্ট অব ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট অফ মালয়েশিয়া (জেএকেআইএম) সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে।
এই মেলায় বাংলাদেশের পাঁচটি শিল্প প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। খাদ্য ও পানীয়, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ব্যবসায়িক চেম্বার -এসব ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ থেকে নওরিস ফুডস লিমিটেড, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রাণ ফুডস, কে এম আর ক্রাফ্ট (লেদার গুডস) এবং মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ মেলায় অংশ নেয়। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেটওয়ার্কিং, বিজনেস ম্যাচমেকিংসহ সার্বিক সহযোগিতা করেছে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) মেলার সমাপনী দিনে মেলা ও বাংলাদেশি স্টল পরিদর্শন করেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। তিনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে মালয়েশিয়ায় তাদের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় মালয়েশিয়া এক্সটারনাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (মেট্রেড) চেয়ারম্যান দাতো সেরি রিজাল মেরিকান নেইনা মেরিকান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দাতুক মোহাম্মদ মুস্তফা আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (কনস্যুলার) মোরশেদ আলম, প্রথম সচিব (প্রেস) সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ, প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) প্রণব কুমার ঘোষসহ হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের হাইকমিশনার জানান, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে হাইকমিশন বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন বাণিজ্য মেলায় অংশ নেওয়াসহ অন্যান্য পরিকল্পনা নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হালাল পণ্যের বাণিজ্য একটি ক্রমবর্ধমান সেক্টর। সাম্প্রতিক সময়ে হালাল পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হালাল বাণিজ্যের পরিমাণও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও হালাল পণ্য বাণিজ্যে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। মালয়েশিয়া হালাল বাণিজ্যে গত ১০ বছর ধরে শীর্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে। বাংলাদেশের হালাল বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সঙ্গে হাইকমিশন কাজ করছে। এছাড়া বাংলাদেশে যৌথ প্রচেষ্টা/প্রকল্প গ্রহণপূর্বক হালাল করিডোর/হালাল হাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক হালাল অর্থনীতির সুযোগ নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ায় ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ মেলায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে হালাল সেক্টরের উন্নয়ন তথা মালয়েশিয়াসহ আসিয়ান অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বাড়বে বলে আশা করা যায়। ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রতিষ্ঠান যাতে এই ধরনের মেলায় অংশ নিতে পারে, সে বিষয়ে হাইকমিশনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
হাইকমিশনার বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সক্রিয় অংশ নেওয়ার জন্য অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ২০তম মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেস এবং দ্য গ্লোবাল হালাল সামিট (জি এইচএ এস) উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ড. আহমেদ জাহিদ হামিদি, মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা।