কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উদ্যোগে এবং কমিউনিকেশন ক্লাবের সহযোগিতায় ‘ভাষার দুই অক্ষ- রূপক ও লক্ষণা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স কক্ষে সেমিনারটি শুরু হয়ে বিকেলে আড়াইটায় শেষ হয়েছে।
সেমিনারটিতে প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াফা আক্তার রিমু ও জাওয়াদ-উর-রাকিন খানের সঞ্চালনায় এবং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম মাওলা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম, প্রভাষক জাকিয়া জাহান এবং বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক আতিকুজ্জামান রাসেল সহ বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান ভাষার উৎপত্তি, অর্থের পরিবর্তন, ব্যবহার এবং প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সকল আওয়াজই ভাষা নয়। অর্থপূর্ণ আওয়াজকেই ভাষা বলা হয়৷ ভাষা হচ্ছে সেই আওয়াজ যা অর্থ উৎপাদন করে। নিজের ভাষা যারা জানছে না বিদেশি ভাষা শিখছে, তাদের শক্তি বৃদ্ধিকরণ হচ্ছে না, গোলামীকরণ হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বর্তমান সাংবাদিক ভাইদের প্রধান দোষ আমি যেটা লক্ষ্য করি সেটা হলো ‘তারা বাক্য লিখতে পারে না’। কোথায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিবে, কোথায় বিস্ময়সূচক চিহ্ন দিবে ঠিক করতে পারছে না। এবং আরেকটা জিনিস হচ্ছে তারা অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, ‘সলিমুল্লাহ খানের কথায় আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে, উনার দক্ষতা নিয়ে মন্তব্য করার জ্ঞান আমারও নেই। পৃথিবীতে দুই ধরনের অক্ষ আছে, একটি অর্থবহন করে আর অন্যটি উচ্চারণ বহন করে। আর যারা অর্থবহন করার সেই অক্ষগুলো বের করেছে তারা বেশি জ্ঞানী। বর্তমান যুগে এই ভাষার অক্ষগুলো বুঝা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, ‘জ্ঞান একটা লেভেলে গিয়ে আলোকবর্তিকায় পরিণত হয়। আর আজকের প্রধান আলোচক সলিমুল্লাহ খান স্যার নিজেকে ঐ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। আমাদেরও উচিত ঐ পর্যায়ে আমাদের জ্ঞান নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। সংস্কৃতির জন্য ভাষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনেক উপাদান, আমি চাই এই উপাদানের চর্চা হোক।’
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘আমাদের জুলাই-আগস্টের যে অভ্যুত্থান ছিলো সেখানে সলিমুল্লাহ স্যার ছিলো একজন স্পোক পার্সন, উনার কথা আমরা সেসময় শুনেছি, উনি আমাদের জন্য সেসময় আলোর বাতি হিসেবে কাজ করেছেন৷ কিন্তু এরকম বাতি একটা থাকলে হবে না, তোমাদের থেকে সলিমুল্লাহ স্যারের মতো লক্ষ লক্ষ বাতি তৈরি হতে হবে। দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে তোমরা বারবার দেশের হাল ধরবে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানটি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য একটা একাডেমিক আলোচনা ছিলো। সংবাদিকতা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাষার গুরুত্ব অনেক। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভাষা ব্যবহার করেই কাজ করে। অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান সেই ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিয়েই আজকের একাডেমিক আলোচনাটি করেছেন, আমরা শিক্ষকরাও তার আলোচনা থেকে সমৃদ্ধ হয়েছি।’