সিরাজগঞ্জ কাজিপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গোয়ালবাথান উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫টি পদে অবৈধ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে।
প্রতিষ্ঠনে কর্মকর্তা- কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, উপস্থিতি খাতায় প্রার্থীর স্বাক্ষর জালিয়াতি ও সভাপতির অনুপস্থিতে স্বাক্ষর জালিয়াতি, অসময়ে বিজ্ঞপ্তি, প্রতিষ্ঠানের গাছ ও ঘর বিক্রয়ে অনিয়ম, ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়ম, নামে মাত্র প্রার্থীর উপস্থিতিতে সহযোগি হিসেবে অংশগ্রহন দেখানোসহ বিস্তর অভিযোগ উঠছে ওই প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে।
এদিকে গোপনে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এবং এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অবৈধ ঘোষনা করে জোড়ালোভাবে তদন্তের দাবী তুলছেন এলাকাবাসী।
ওই ৫টি পদে যোগদানকৃতরা হলেন, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মো: মাসুদ রানা, সহকারী গ্রন্থগারিক কাম ক্যাটালগার কাকলি ছন্দা, অফিস সহায়ক মো: জুয়েল রানা, আয়া মোছা: ছনিয়া খাতুন, নৈশ প্রহরী মো: আলমগীর হোসেন।
এ বিষয়ে সহকারী গ্রন্থগারিক কাম ক্যাটালগার কাকলি ছন্দা বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে খন্ডকালিন শিক্ষক হয়ে আছি। বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষক নেই যার কারনে আমি বিজ্ঞান ক্লাশ নিয়ে থাকি। বিদ্যালয়ের অনলাইনে পিডিএস আইডি ১০১২৯৯১৯০ নম্বর কিভাবে পড়ল এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মো: মাসুদ রানা বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় সাহেব আমাকে চাকরি দিয়েছে। যা কিছু বলার প্রধান শিক্ষককে বলেন। নিয়োগ নিয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.নজরুল ইসলাম বলেন, ৫টি নয় ৪টি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নগদ টাকা নেওয়া হয়নি তবে জমি নেওয়া হয়েছে। আরেকজনের নাম কিভাবে অনলাইনে পিআইডিএস আইডি ১০১২৯৯১৯০ এ আসলো এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।
নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়নের ৯ন ওয়ার্ডের গোয়াল বাথান গ্রামের ইউপি সদস্য রিপন বলেন, এ নিয়োগে কোন পরীক্ষা হয়নি। ৮ই জানুয়ারী পরীক্ষার কথা বলছে অথচ ওই দিন এমপি জয়কে ফুলের মালা দেয়ার জন্য গিয়েছিল। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে আমরাসহ গ্রামের অনেকেই জানতো কিন্তুু কেউ বলতে পারবে না।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কাজলগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, জানুয়ারী ১ তারিখে ঢাকার উদ্দ্যশে ইজতেমায় যাই। ওইখান থেকে ৫ রমযানে বাড়ীতে আসি। আসার পর প্রধান শিক্ষক ঢেকে নিয়ে আমাকে মিষ্টি দিয়ে বলেছিলো ৪ জনকে নিয়োগ দিছি। নিয়োগ কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া কিভাবে নিয়োগ হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যাওয়ার আগেরদিন আমার কাছ থেকে পিয়ন আনোয়ার সিল স্বাক্ষর নিয়ে রেখে দিছিলো। কিভাবে হলো আমি তা বলতে পারবো না।
নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি কাজিপুর এ.এম ইউ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওই নিয়োগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি ছিলেন। প্রার্থীদেরকে ৪০ মিনিটের পরীক্ষা নেয়া হয় এবং তারপরেই ফলাফল ঘোষনা করে চূড়ান্ত ফলাফল সীটে স্বাক্ষর দিয়ে চলে আসছি। সভাপতি ওই নিয়োগের সময় বাহিরে ছিলেন তাহলে ওই দিন তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষর কিভাবে হলো এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।
এদিকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ভেটেরিনারী সার্জন ডা:মো.মাহমুদুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। খুব শিগ্রই শেষ হবে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন বলেন, অভিযোগের ভিত্তিত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিত্বে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।