নিউজ ডেস্ক:
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে চিনি আমদানি হয়েছে দুই লাখ টন, যা গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬৪ শতাংশ কম। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করতেই আমদানি কমিয়ে আনা হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর দেশে চিনি আমদানি হয় আট থেকে সাড়ে আট লাখ টন। আমদানিকৃত এ চিনির সিংহভাগই হলো অপরিশোধিত। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছিল ৮ লাখ ৩৮ হাজার টন। আর আমদানিকৃত পরিশোধিত চিনির পরিমাণ ছিল মাত্র আট হাজার টন। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টন, যার শুল্কায়ন মূল্য ধরা হয়েছে ৭৫৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এ সময়ে আমদানি হয়েছিল ৫ লাখ ৬৩ হাজার টন, যার শুল্কায়ন মূল্য ছিল ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পণ্যটির আমদানি কমেছে প্রায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টন বা ৬৪ শতাংশ।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি প্রতিষ্ঠান ও ১০-১২ জন ডিলার বা এজেন্ট। এ সিন্ডিকেটটি দেশের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকেই আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এর আগেও চিনি আমদানিকারক ও ডিলাররা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করেছে।
তবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার এ অভিযোগ অস্বীকার করেন আমদানিকারকরা।
এ প্রসঙ্গে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়তির দিকে। এ কারণে এখন বেশি পরিমাণে চিনি আমদানি করলে, পরে দাম কমে গিয়ে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করেই দেশের চাহিদা অনুযায়ী চিনি আমদানি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে গত বছরের তুলনায় চিনি আমদানির পরিমাণ কমলেও বাজারে যাতে সংকট তৈরি না হয়, সে বিষয়েও খেয়াল রাখা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত দুই সপ্তাহে পণ্যটির দাম মণপ্রতি ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে প্রতি মণ চিনি ২ হাজার ১৬০ থেকে ২ হাজার ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে পণ্যটির দাম মণপ্রতি ৭০০-৮০০ টাকা বেড়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর থেকে জানা যায়, গতকাল প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৬৫-৬৮ টাকা দরে। অথচ এক বছর আগেও পণ্যটি ৪৪-৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। অর্থাৎ এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশ।
কাস্টমসের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে ৫৫ হাজার ৫০০ টন, যার শুল্কায়ন মূল্য ২১১ কোটি টাকা। চিনি আমদানির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে শুল্ক পরিশোধ করেছে ৯৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। অথচ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছিল ২ লাখ ২৪ হাজার টন। ৫৮৫ কোটি শুল্কায়ন মূল্যের এসব চালানে সরকারকে ১৩১ কোটি টাকার শুল্ক পরিশোধ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
তবে গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চিনি আমদানি বাড়িয়েছে আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ৫৪৯ কোটি টাকা মূল্যের দেড় লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে। এসব চালানে সরকারকে শুল্ক পরিশোধ করা হয়েছে ২৪৩ কোটি টাকা।
এদিকে গত অর্থবছরের একই সময়ের মধ্যে ইউনাইটেড সুগার মিলস লিমিটেড সাড়ে ৫২ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করলেও চলতি অর্থবছর তারাকোনো চিনি আমদানি করেনি।