নিউজ ডেস্ক:
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলো যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে সেক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এসডিজির অগ্রগতির আলোকে চলমান ‘হাই লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম (এইচএলপিএফ)’এর এক আলোচনায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এই আহ্বান জানান।
ইকোসক আয়োজিত “পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য নিরসন ও সমৃদ্ধি উন্নয়ন : বিশেষ পরিস্থিতিতে ও বিশেষ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্পোন্নত, ভূ-পরিবেষ্টিত স্বল্পোন্নত ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য করণীয়” শীর্ষক সাইড ইভেন্টের অন্যতম প্রধান আলোচক হিসেবে গত বুধবার বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশসমূহের বৈশ্বিক সমন্বয়কারী।
এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্পোন্নত দেশসমূহ কীভাবে কাজ করছে সে বিষয়ে সভায় ক. স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংঘর্ষ ও দেশান্তরের মতো অবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশসমূহ গৃহীত পদক্ষেপ ও নীতিমালার সাফল্য, খ. সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এ জাতীয় অভিগমনের অন্তর্নিহিত আর্থ-সামাজিক মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপ, এবং গ. এসডিজি’র মনিটরিং ও ফলোআপের ক্ষেত্রে এলডিসিভুক্ত দেশসমূহে কোন ধরনের প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ-ব্যবস্থা কার্যকর বলে বিবেচিত হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়।
এসডিজির এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্পোন্নত দেশসমূহ অনেক ক্ষেত্রে দেশীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “প্রতিবেশগত অভিযোজন নীতির বাস্তবায়নে বাংলাদেশ স্থানীয় জ্ঞান ব্যবহার করে জনগণ ও স্থানীয় সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেছি, যা অত্যন্ত কার্যকর একটি পদক্ষেপ। দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে আমরা যে সক্ষমতা তৈরি করেছি সে অভিজ্ঞতা আমরা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সাথে বিনিময় করছি”।
তথ্য-প্রযুক্তি ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ব্যবস্থা বিষয়ক আলোচনায় স্থায়ী প্রতিনিধি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “বাংলাদেশ মানসম্মত উপাত্ত সরবরাহ এবং উপাত্ত সংগ্রহ নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো ড্যাটা ওয়ারহাউজ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে”।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তাঁর কার্যালয় ‘একসেস টু ইনফরমেশন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যা সহজলভ্য, মানসম্মত ও নির্ভরযোগ্য সেবামূলক তথ্য-প্রযুক্তির উদ্ভাবনী গবেষণাগার হিসেবে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিতি পেয়েছে। এছাড়া সরকার পাঁচ হাজারেরও বেশি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা, ৪৩ হাজারেরও বেশি দপ্তরের ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় ওয়েভ পোর্টাল তৈরিসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসকল পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার মানুষের দোড়গোড়ায় তথ্য-প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দিচ্ছে”।
ইকোসকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান ব্যরোজ মিলেট এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
গত ১০ জুলাই সোমবার থেকে শুরু হওয়া এইচএলপিএফ-এর কর্মসূচি আগামী ১৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
এইচএলপিএফ-এর এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়নের জাতীয় রিপোর্ট ‘ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ’ সেশনে উপস্থাপন করবে। ১৭ থেকে ১৯ জুলাই এর কর্মসূচিতে এইচএলপিএফ-এর মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় নেতৃত্ব দিবেন বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারি আবুল কালাম আজাদ, পিকেএসএফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল করিমসহ একটি উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল থাকবে সে অধিবেশনে।