নিউজ ডেস্ক:
লস এঞ্জেলেসে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল কাজী আনারকলির গৃহকর্মী ছয় মাস যাবত নিখোঁজ। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতিমধ্যেই বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। এ সংবাদদাতার কাছে তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ।
গত রমজানের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল মো. শাহেদলু ইসলাম এবং জাতিসংঘে ইউএনডিপির বাংলাদেশি কর্মকর্তা হামিদুর রশীদের বিরুদ্ধে গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলা এবং এই দুই কূটনীতিককে গ্রেফতারের ঘটনায় সৃষ্ট নানা প্রশ্নের মধ্যেই লস এঞ্জেলেসের গৃহকর্মী নিখোঁজ-সংবাদ এলো। তবে এই গৃহকর্মীর পক্ষ থেকে লস এঞ্জেলেস পুলিশে কোন অভিযোগ করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ডেপুটি কনসাল জেনারেল কাজী আনারকলি ২০১৫ সালে এই পদে যোগদানের সময়েই তার গ্রামের বাড়ী বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পিপড়াকাঠির সাব্বির (৪০) নামক পরিচিত একজনকে নিয়ে আসেন গৃহকর্মী হিসেবে। সাথে রয়েছেন তার (আনারকলির) মা ও এক সন্তান।
‘নিউইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, ঠিক একই ধরনের অভিযোগ লস এঞ্জেলেসের পুলিশসহ মানবাধিকার সংস্থায় করেছেন বাসা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া গৃহকর্মী সাব্বির’-এমন গুঞ্জন রয়েছে লস এঞ্জেলেসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে।
সেখানকার কম্যুনিটি লিডার ও মূকাভিনেতা কাজী মশহুরুল হুদা বলেন, কন্স্যুলেট অফিস মুখ না খোলায় কেউই নিশ্চিত হতে পারছি না। তবে একটা কিছু ঘটেছে, এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কয়েক সপ্তাহ আগে কাজী আনারকলি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। সে সময়েই গৃহকর্মী পালিয়ে মানবাধিকার সংস্থায় আশ্রয় নিয়েছেন বলেও কম্যুনিটিতে গুঞ্জন রয়েছে।
‘নির্যাতিত গৃহকর্মীরা খুব স্বল্পতম সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পান’-বলেই তারা মানবাধিকার সংস্থার দ্বারস্থ হচ্ছেন-উল্লেখ করেন কম্যুনিটির আরেক নেতা।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অভিপ্রায়ে গৃহকর্মীরা এ ধরনের অভিযোগ করেছেন আরো কয়েক বাংলাদেশি কূটনীতিকের বিরুদ্ধে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কাতারের কূটনীতিকরাও বাদ যায়নি এ ধরনের অভিযোগ থেকে। তবে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে কয়েক বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক নাম গোপন রাখার শর্তে এ সংবাদদাতাকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মহল বিশেষের ফাঁদে গৃহকর্মীরা পা দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ, সকলেই যে গ্রিনকার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের মতলবে গৃহকর্তাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে নিউইয়র্কের প্রবাসীরা সোচ্চার হয়েছেন। জাতীয় স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে একইভাবে সোচ্চার হয়ে ষড়যন্ত্রের মদদদাতাদের চিহ্নিত করা জরুরি।
লস এঞ্জেলেসের কনসাল জেনারেল প্রিয়তোষ সাহা এবং ডেপুটি কনসাল জেনারেল কাজী আনারকলীর সেলফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত জবাব আসেনি। টেক্সট মেসেজেও সাড়া দেননি তারা।
ঢাকাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কাজী আনারকলিকে জাকার্তায় বদলীর নির্দেশ জারি হয়েছে। তিনি সেখানে শীঘ্রই যোগদান করবেন।
নিউইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেলের মতো কাজী আনারকলিযাতে গ্রেফতার না হন, সে জন্যেই নিখোঁজ গৃহকর্মীর মামলা চালুর আগেই তাকে সরিয়ে নেয়ার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে বলেও সূত্রটি উল্লেখ করেছে।
২০১৪ সালে একই কারণে নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামকেও দ্রুত বদলির মধ্য দিয়ে তার গ্রেফতার এড়ানো সম্ভব হয়। এখনো সে মামলা ঝুলছে নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্টে।