আধুনিক গ্রিসের প্রায় পুরোটাই মুসলমানদের শাসনাধীন ছিল। তুরস্কের উসমানীয় শাসকরা ১৪৫৮ থেকে ১৮২১ সাল পর্যন্ত গ্রিস শাসন করে। গ্রিসের রাজধানী এথেন্সও এর বাইরে ছিল না। মুসলিম শাসকরা এ সময় এথেন্সে অসংখ্য স্থাপনা গড়ে তোলে। তবে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মাধ্যমে তুর্কি শাসনের অবসান ঘটায় গ্রিকরা এসব স্থাপনার বেশির ভাগই ধ্বংস করে ফেলে। গ্রিকদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ও দীর্ঘদিন অতিক্রম করার পরও এখনো এথেন্সে বেশ কিছু মুসলিম স্থাপনা টিকে আছে। যা এথেন্সে গৌরবময় মুসলিম শাসনের স্মৃতি। এথেন্স ছাড়াও উত্তর-পশ্চিম গ্রিসে, যেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমরা বসবাস করে সেখানে মুসলিম আমলের কিছু প্রাচীন স্থাপনা টিকে আছে। নিম্নে এথেন্সে টিকে থাকা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম স্থাপত্যের বর্ণনা তুলে ধরা হলো।
১. তিস্তারাকিজ মসজিদ: এথেন্সের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র তিস্তারাকিজ মসজিদ। এথেন্সের মোনাস্টিরাকি স্কয়ারে অবস্থিত মসজিদটি ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। উসমানীয় গভর্নর মোস্তফা আগা তিস্তারাকিজের নামে মসজিদের নামকরণ করা হয়। কথিত আছে, মসজিদটি নির্মাণের কাজে প্রাচীন গ্রিক মন্দিরের একটি স্তম্ভ ব্যবহার করা হয়েছিল। যা ছিল উসমানীয় সুলতানের নির্দেশ পরিপন্থী। ফলে তাঁকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত তিস্তারাকিজ মসজিদে নিয়মিত নামাজ হতো। ১৮২১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর মসজিদটি বিভিন্ন সময় সেনা ছাউনি, গুদাম ঘর, জেলখানাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহূত হয়েছে। বর্তমানে তা জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৮৩৯ থেকে ১৮৪৩ সালের মধ্যে কোনো এক সময় মসজিদের মিনারটি ধ্বংস করা হয়।
২. প্রাচীন মাদরাসার দরজা: ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল উসমানীয় আমলের এই মাদরাসাটি। এটি ছিল মুসলিম জনসাধারণের সামাজিক কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠাকালে মাদরাসার একটি প্রশস্ত উঠোন ও আবাসিক ভবন ছিল। তুর্কি শাসনের অবসান ঘটলে মাদরাসার বেশির ভাগই ধ্বংস করা হয়। পরবর্তীতে মেরামত করে তা কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মাদরাসার মাঠে অভিযুক্তদের ফাঁসি দেওয়া হতো। এক সময় কারাগারটি বন্ধ করা হয়। রোমান ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধানের জন্য খনন কাজ করা হলে মাদরাসার স্মৃতি চিহ্নটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে কেবল মাদরাসার দরজাটিই টিকে আছে।
৩. ফাতেহি মসজিদ: এথেন্সের প্রাচীন আগোরায় অবস্থিত ফাতেহি মসজিদ। তিস্তারাকিজ মসজিদের সঙ্গে এর দূরত্ব সামান্য। গ্রিস বিজয়ের নিদর্শন হিসেবে ফাতেহি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। অভিযোগ করা হয়, মসজিদটি একটি খ্রিস্টান ব্যাসিলিকার (প্রার্থনাকক্ষ) ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল। মুসলিম শাসনের অবসান ঘটলে মসজিদটি বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়, সেনা ছাউনি, কারাগার ও সামরিক বেকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ২০১০ সালে গ্রিক সরকার মসজিদটি পুরাতন অবকাঠামোয় ফিরিয়ে নেওয়ার সদ্ধিান্ত নেই। ২০১৭ সালে তা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
৫. ভেনিজেলজ ম্যানসন: খ্রিস্টীয় ১৫ শতকে নির্মিত হয় ভেনিজেলজ ম্যানসন। এটি এথেন্সের প্রাচীনতম বাড়িগুলোর একটি। দ্বিতল বাড়িটি ১৯ শতকে সংস্কার করা হয় এবং বর্তমানে তা একটি ব্যক্তিগত জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাড়িটি এথেন্সে তুর্কি জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরে। বাড়িটি উচু দেয়ালে ঘেরা। এর সামনে আছে ছোট চত্বর, একটি পানির কূপ ও ঝরনা। ২০১৭ সালে জাদুঘর হিসেবে বাড়িটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
মিডল ইস্ট আই অবলম্বনে