নিউজ ডেস্ক:
২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে প্রায় ৪ লাখ ২০০ কোটি টাকার বাজেট আসছে। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি।
২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুষম উন্নয়ন ও শিল্পায়নবান্ধব বাজেটের পক্ষে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বড় বাজেট প্রণয়নের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। তবে আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ বাস্তবায়ন।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ আগামী বাজেট বিষয়ে বলেন, জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের স্বার্থে সরকার শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়নে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা। সবার সঙ্গে আলোচনা করে গুণগতমান ও বাস্তবায়ন সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে বাজেটের আকার নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যাতে জনগণ বৃহৎ বাজেটের ভার সহ্য করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের সুষ্ঠু ও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা থাকতে হবে। অন্যথায় বাজেট কার্যকর করা দুরুহ হবে। এ ছাড়া গুণগত মান বজায় রেখে বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করা এফবিসিসিআইর বাজেট প্রস্তাবনায় আয়কর, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) বিষয়ে মোট ৪২৩টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ কর (আয়কর) বিষয়ে ৮৩টি, আমদানি শুল্ক বিষয়ে ২৬৯টি এবং মূল্য সংযোজন কর বিষয়ে (ভ্যাট) ৭১টিসহ ৪২৩টি প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ব্যক্তি আয়করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ, সব কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার ২৫ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ রাখা, ব্যক্তি করদাতার প্রদর্শিত নিট পরিসম্পদের ভিত্তিতে সারচার্জের শূন্য শতাংশের সীমা ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়ানো, পোশাকসহ সব রপ্তানি উৎসে কর ০.৭ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ ধার্য করা, দেশীয় শিল্পের বিকাশ, বর্ধিত হারে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান এবং ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে বর্তমান শুল্কস্তর ১, ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ শতাংশ অব্যাহত রাখা, আন্ডার ইনভয়েসিং এবং মিস ডিক্লারেশন রোধের জন্য পণ্যভিত্তিক বিনিময় মূল্যের ডাটাবেজ প্রণয়নের লক্ষ্যে এনবিআর, এফবিসিসিআই, ট্যারিফ কমিশন, শুল্ক মূল্যায়ন কমিশনারেটের সমন্বয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠন প্রভৃতি।
নতুন মূসক আইন অনুযায়ী ১ হাজার ৫২০টি পণ্য ও সেবার মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি পণ্য ও সেবা থেকে সম্পূরক শুল্ক উঠে যাবে। এতে দেশীয় বাজারে বিদেশি পণ্য নিয়ন্ত্রণ করবে এবং স্থানীয় শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এ কারণে বর্তমানে সেসব পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা আছে তা অব্যাহত রাখা বা রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আগামী বাজেটে নতুন মূসক বা ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে মূদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, আমরা নতুন ভ্যাট আইন চাই। তবে ভ্যাটের হার যেন ৭ শতাংশ হয়। আমরা আশঙ্কা করছি, সবক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, আগামী বাজেটে শিল্প ও জিডিপির হার ২৯ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, শিল্প কর্মসংস্থানের হার ১৮ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, শিল্পনীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নকে সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
বড় বাজেটের পক্ষে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গত কয়েক বছর বড় বাজেট দিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে না পারার অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি যাতে না আর ঘটে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি বড় বাজেট বাস্তবায়নে সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। নতুন ভ্যাট আইন বস্তবায়নের পক্ষে সিপিডি। তবে ভ্যাটের হার বিদ্যমান ১৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
সিডিপির প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক ও সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বাজেট বিষয়ে বলেন, আমরা সম্প্রসারণশীল বাজেটের পক্ষে। আগামী বাজেট ৪ লাখ ২০০ কোটি টাকার বাজেট হতে পারে। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে বড় বাজেটের গুরুত্ব রয়েছে। তবে বড় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। এজন্য বাজেট বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি।