জুবাইর হোসেন (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)
পোষ্য কোটার দাবিতে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। মুখোমুখি অবস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগামী রবিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে, পোষ্য কোটা পূর্বের ন্যায় ৫ শতাংশে পূনর্বহাল না করলে আগামী ৮ জানুয়ারি কর্মবিরতিতে যাওয়ার ডাক দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতি।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাবির অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার শিক্ষার্থীদের পক্ষে শাটডাউনের ঘোষণা দেন। একইদিন সকাল সাড়ে ১১টায় অফিসার্স সমিতি নিজ কার্যালয়ে এক সভায় এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সমিতিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মোক্তার হোসেন।
কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দিয়ে সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানায়। আমরা গতকাল রাতেই এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছি। আমরা ঘোষণা দিয়েই প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়েছি। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোটা রাখার বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা প্রথা একটা হাস্যকর বিষয়। অবিলম্বে পোষ্য কোটা বাতিল করে মেধাবীদের মুক্তি দিতে হবে। আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে পোষ্য কোটা বাতিল করা না হলে রবিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন করা হবে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোও ক্যাম্পাসের বাহিরে যেতে দেওয়া হবে না।
কর্মবিরতির বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মোক্তার হোসেন বলেন, আমরা আগামী পাঁচ তারিখে ভিসি স্যারের সাথে দেখা করবো। তিনি যদি আমাদের দাবি মেনে না নেন তাহলে ৬ তারিখে মানববন্ধন, ৭ তারিখে আমরা অবস্থান কর্মসূচি এবং ৮ তারিখে আমরা দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করবো। তাতেও যদি কোন সমাধান না হয় তাহলে আমরা লাগাতার কর্মসূচিতে যাবো এবং কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দেব।
এদিকে সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান। তবে, শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখান করেন এবং অবিলম্বে পোষ্য কোটার পুরোপুরি বাতিল চান। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন রাবি উপ-উপাচার্য এবং বলেন, ‘তোমরা যা করছো তা অন্যায়; এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রেখে কোন সমাধান আসবে না। কর্মকর্তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও; আমরা আছি এখানে।’
শিক্ষার্থীরা তখনও প্রশাসন ভবনের তালা খুলতে অস্বীকৃতি জানালে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান নিজেই দরজা খোলার চেষ্টা করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাথে শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা কমপ্লিট শাটডাউন করতেই পারে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে আলাপ-আলোচনার বিকল্প নেই। বিষয়টি সমাধানে আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গেই কথা বলবো। কারণ, এ ধরনের কর্মসূচি পালিত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই না আমাদের কোন শিক্ষার্থীর ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হোক।
এর আগে সব ধরনের পোষ্য কোটা বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে সকাল ১০টা থেকে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এতে গত ৭ ঘণ্টা ধরে প্রশাসন ভবনে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশেষ প্রয়োজনেও কাউকে বের হতে বা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া খাবারও খেতে পারেননি আটকে থাকা ব্যক্তিরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকে। তবে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দিলেও কোটার বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।