অন্যের কোনো দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় এমন চক্র সব যুগেই কমবেশি ছিল। এক শ্রেণির মানুষ এ ধরনের মামলা বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধভাবে কোটিপতি হওয়ার চেষ্টা করে। এই মামলাগুলোর উদ্দেশ্য সাধারণত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয় না বরং টার্গেট করা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিকে বিব্রত করে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নেওয়াই এই মামলাগুলোর উদ্দেশ্য থাকে।
ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের কাজ জঘন্য হারাম।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এ ধরনের কাজ নিষিদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা নিজদের মধ্যে তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং তা বিচারকদের (ঘুষ হিসেবে) প্রদান কোরো না। যাতে মানুষের সম্পদের কোনো অংশ পাপের মাধ্যমে জেনে-বুঝে খেয়ে ফেলতে পারো। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৮)
অনেক সময় মানুষ আইন-আদালতকে অস্ত্র বানিয়ে বানোয়াট তথ্য-প্রমাণ দাঁড় করিয়ে কিংবা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা মামলা করে অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নেয়, এটা স্পষ্ট হারাম।
আদালতের ফায়সালা জুলুম ও হারামকে বৈধ ও হালাল করতে পারবে না। চতুরতার জোরে দুনিয়ার আদালতে তারা বিজয়ী ও প্রকৃত হকদার প্রমাণিত হলেও আল্লাহর আদালতে তারা জঘন্য অপরাধী বিবেচিত হবে। (ইবনে কাসির)
অন্যকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা করা ও মিথ্যা কসম করা আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে। যারা সামান্য স্বার্থের জন্য এত বড় পাপে লিপ্ত হয়, কিয়ামতের দিন তারা মহান রবের সামনে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে আল্লাহ তাদের ওপর ভীষণ রেগে আছেন।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আলকামা ইবনু ওয়াইল (রা.)-এর বাবা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাযরামাওত এলাকার একজন লোক এবং কিনদার একজন লোক এসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হাজির হলো। হাযরামী বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার অল্প কিছু জমি জোরপূর্বক এই লোক দখল করে নিয়েছে। কিনদি বলল, সেটা আমার জমি, আমার দখলেই আছে, সেটাতে তার কোনো মালিকানা নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাযরামীকে বলেন, তোমার কাছে কোনো প্রকারের সাক্ষী-প্রমাণ আছে কি? সে বলল, না। তিনি বলেন, তাহলে তোমাকে তার শপথের ওপর নির্ভর করতে হবে।
সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এ লোকটি তো বদমাশ, যেকোনো ব্যাপারে শপথ করতে তার কোনো দ্বিধা নেই, কোনো কিছুতেই তার ভীতি-বিহ্বলতা নেই। তিনি বলেন, এটা ব্যতীত তোমার আর কোনো উপায় নেই।
বর্ণনাকারী বলেন, কিনদী শপথের উদ্দেশ্যে এগিয়ে এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি অন্যায়ভাবে তার সম্পদ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সে মিথ্যা শপথ করে তবে সে এমনভাবে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে যে আল্লাহ তাআলা তার থেকে (অসন্তোষে) মুখ সরিয়ে নেবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৪০)
নাউজুবিল্লাহ, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ যার থেকে মুখ সরিয়ে নেবেন, তার চেয়ে বড় হতভাগা আর কে হতে পারে! জেনেশুনে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ফন্দি করে কিংবা মামলা করে হয়তো সাময়িক কিছু সম্পদ অর্জন হবে, কিন্তু এই কাজটিই কারো কারো জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আল্লাহর আদালতে কোনো মিথ্যা সাক্ষ্য দাঁড় করানোর সুযোগ থাকবে না। মানুষ ঠকানোর তীক্ষ্ম বুদ্ধি তখন কোনো কাজে আসবে না। মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।