নিউজ ডেস্ক:
বেশিরভাগ শেয়ারহোল্ডারের অজ্ঞাতে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে, তা জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
ইসলামী ব্যাংকে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) পাশাপাশি সৌদি আরব ও কুয়েতের ৫২ শতাংশ শেয়ার আছে। সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে যে পরিবর্তন হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে আইডিবি। ভবিষ্যতে ব্যাংকটি যাতে আগের মতোই আন্তর্জাতিক মানের করপোরেট সুশাসন বজায় রেখে চলতে পারে সে ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ জানিয়েছে আইডিবি।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিকেদের বলেছিলেন, ‘বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিতেই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে।’
এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আইডিবির নতুন প্রেসিডেন্ট তার উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে যেভাবে পরিবর্তন আনা হয়েছে সেটা বিধিসম্মত হয়নি বলেও জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইটস অ্যা প্রিটি সিরিয়াস ম্যাটার।’
তাকে প্রশ্ন করা হয়, কীভাবে এটি ঘটল? এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মাই ইমপ্রেশন ওয়াজ ডিফারেন্ট। বিকজ দ্য প্রিভিয়াস আইডিবি প্রেসিডেন্ট আহমেদ মোহাম্মদ আলী ব্রট টু মাই নোটিশ সাম প্রোবলেম ইউথ দ্য ইসলামি ব্যাংক। আই থট দ্যাট, সেইম ইন্টারেস্ট উড বি কনটিনিউ ইন দ্য আইডিবি। বাট প্রেজেন্ট প্রেসিডেন্ট অব আইডিবি ডিড নট নো এনিথিং অ্যাবাউট দ্য ম্যাটার। আই হ্যাভ আকসড ফর এ রিপোর্ট ফ্রম দ্য গভর্নর অব বাংলাদেশ ব্যাংক, দ্যাট হাউ ডিড ইট হ্যাপেন হোয়েন দ্যা মেজরিটি শেয়ারহোল্ডার আর নট পার্টিসিপেট টু দ্যা রিসেন্ট চেঞ্জ অব দ্যা ব্যাংক। দি গর্ভনর সুড নো দ্য ম্যাটার অ্যাজ দ্য চেঞ্জওভার উড নট টেক প্লেস ইউথ দেয়ার নলেজড।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে আইডিবির প্রেসিডেন্ট ড. বন্দর এম এইচ হাজ্জার একটি চিঠি পাঠান। এর অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, আইডিবির চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকে বড় পরিবর্তনের পরে খুব কম সময়ের নোটিসে বোর্ড সভা ডাকা একটা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে বিদেশি পরিচালকরা সভার নথিপত্র পর্যালোচনা এবং সভায় অংশ নিতে পারছেন না। অনেক সময় সভা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে সভার নথিপত্র দেওয়া হচ্ছে। গত ৫ জানুয়ারির যে সভায় পরিবর্তন আনা হয় সেই নোটিস দেওয়া হয় ২ জানুয়ারি। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ ওই সভায় আইডিবির প্রতিনিধি উপস্থিত হতে পারেননি। আর এ কারণেই সাম্প্রতিক পরিবর্তনে আইডিবির অবস্থান জানানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
এতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের মতো নিয়ম মেনে চলা ব্যাংকের নতুন এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রচলিত নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। সাধারণ নিয়মে দেখা যায়, এমডি নিয়োগের জন্য স্বনামধন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়। পরে পর্ষদের সমন্বয়ে বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। যারা আবেদন করবেন, তাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নাম সুপারিশ করা হবে। তবে সবার কাছে স্পষ্ট যে, নতুন এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে সেসব নিয়ম মানা হয়নি।
আইডিবির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, যদি প্রাক্তন এমডিকে অপসারণ খুব জরুরি হতো, তা হলে সাময়িকভাবে একজন ভারপ্রাপ্ত এমডি নিয়োগ করা যেত। বাছাই পর্ষদের কাছে কোনো সুপারিশ না জমা দেওয়া পর্যন্ত তিনিই থাকতেন। এক্ষেত্রে পর্ষদকে না জানিয়ে এ ধরনের আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রচলিত নিয়ম মানা হয়নি। দেশের শীর্ষ একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য এটা মানানসই হয়নি বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে আইডিবি জানিয়েছে, বিদেশিদের চাপে ব্যাংকে পরিবর্তন এসেছে বলে ৯ জানুয়ারি সংবাদপত্রে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা ঠিক নয়। আইডিবিসহ সৌদি আরব ও কুয়েতের শেয়ারধারীরা ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বিদেশি শেয়ারধারীদের গুরুত্ব কম দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আইডিবি প্রেসিডেন্টের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে আইডিবির ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতি বিকাশে আইডিবি সহয়তা করে আসছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাংকটির সফলতার ফলে নাইজেরিয়াতে আইডিবির উদ্যোগে জায়েজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছে, যাতে সহায়তা করেছে ইসলামী ব্যাংক। আইডিবি বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এই সম্পর্ক ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। ইসলামী ব্যাংকে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করছি।