ইবিতে অনুষ্ঠিত জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ও গণমাধ্যম শীর্ষক সেমিনার

0
11

শুভ, ইবি প্রতিনিধি

জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ও গণমাধ্যম শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ইবিসাস)। আজ সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এবং প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জনাব শফিকুল আলম। এছাড়াও উপস্থিত বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম এয়াকুব আলী ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সভাপতি (ইবিসাস) মাননীয় ট্রেজারার প্রফেসর ড. হোসাইন আল মামুন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ রশিদুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী বৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

আজকের এই অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষায় উঠে আসে দুর্নীতি মুক্ত দেশ গড়ার। সেই সাথে আর যেন কেউ ফ্যাসিবাদী সরকার হয়ে না উঠতে সেই দিকে দৃষ্টি রাখা। এছাড়াও দেশের সকল ধরণের বৈষম্য দূর করে এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের সকল প্রকার ক্ষমতাসীন আসন বিলুপ্ত করে সকল প্রকার চাকরির ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথাও এখানে বলা হয়। এছাড়াও সেমিনারে বলা হয় জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল এক অনন্য । সেই সাথে গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা দূর করে সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজমুল হকের সঞ্চালনায় বক্তব্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, আমি প্রথমেই স্মরণ করেন যারা ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১ সালে দেশের জন্য রক্ত দিয়েছন, সেই সাথে যারা সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিবাদী সরকার ও বৈষম্য দূর করতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি বলেন জুলাই বিপ্লবে সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাদের তথ্যের ভিত্তিতেই এই আন্দোলনকে সফল করতে পেরেছি। সেই সাথে তিনি জুলাই বিপ্লবকে যেসব সাংবাদিক ব্যর্থ করার প্রয়াস করছিল তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, এই জুলাইয়ের বিপ্লবের ঘোষণা পত্র জারি করা এখন সময়ের দাবি। তাই অতি দ্রুত সরকারকে ঘোষণা পত্র জারির জন্য আহ্বান জানান।

প্রধান আলোচক জনাব শফিকুল আলম বলেন, আমরা সকল বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে অনেক কিছু অর্জনে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। এমনকি ইতোমধ্যেই অনেক কিছু অর্জন করেছি। জুলাই বিপ্লবের যে অর্থনীতি ভেঙে যাচ্ছিল সেখানে আজকে দেশের অর্থনীতির অবস্থা একটি ভালো অবস্থানে আছে। সেই সাথে আমরা চীনা অর্থনীতির সাথে কথা বলে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। এছাড়াও সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশ গুলো সাথে কথা বলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি। সেই সাথে এশিয়ান দেশগুলোর সাথে কীভাবে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় সেই লক্ষ্যেও কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, দেশ এগিয়ে নিতে যেতে হলে চাই সবার ঐক্যবদ্ধতা। যেভাবে আমরা ফ্যাসিবাদী সরকার দূর করেছি ঠিক সেভাবেই আমরা দেশকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো। এছাড়াও তিনি জুলাই বিপ্লবে নিজের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মতবিনিময় করেন।

প্রধান অতিথি মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীরা প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এখানে যারা শহীদ হয়েছেন আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। তিনি আরো বলেন, আমরা দেখেছি কিভাবে ফ্যাসিবাদী সরকার তাদের একমাত্র শাসন করেছিল, কিভাবে জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল, কিভাবে দেশের মানুষকে বৈষম্যের মুখে ঠেলে দিয়েছিল । আজকে আমরা জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে সে সকল স্বাধীনতা ফিরে পেতে চলেছি। আমাদের আগামী বাংলাদেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ এবং বৈষম্য বিহীন। অন্তবর্তী কালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মোঃ ইউনুসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন যিনি আজকে দেশের সংস্কারে কাজ করেছেন। সেই সাথে তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সৎ, নির্ভীক সংবাদিকদের যারা জুলাই বিপ্লব চলাকালীন বিভিন্নভাবে আমাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন।

অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোঃ রশিদুজ্জামান সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম কে যিনি মূল্যবান সময় ব্যয় করে আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের যে রক্ত স্নান এবং যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দিয়ে আজকে আমরা যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি তাদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা তা বলে শেষ করবার নয়। তারা যে অনুপ্রেরণা ও সাহস জাগিয়ে গেছে তা দিয়ে গড়ে উঠবে আমাদের এই দেশ। আর একটি সুন্দর দেশ গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে আমাদের এই গণমাধ্যম।