মুফাসসিরে কেরাম বলেন, এ আয়াতে ‘তাগুত’ বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন শাসককে বুঝানো হয়েছে, যিনি ইনসাফ বাদ দিয়ে জনগণের ওপর জুলুমের নীতি গ্রহণ করে নিয়েছেন। একইভাবে এমন সব বিচারক ও বিচার ব্যবস্থাকে তাগুত বলা হয় যেখানে জুলুমের ভিত্তিতে বিচার করা হয়। কাজেই যে আদালত ইনসাফ বাদ দিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে সে আদালতে বিচারপ্রার্থী হওয়া কেবল নাজায়েজই নয় ইমান বিরোধীও বটে। আর আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের ওপর ঈমান আনার অপরিহার্য দাবি অনুযায়ী এ ধরনের আদালতকে বৈধ আদালত হিসেবে অস্বীকৃত জানানোই প্রত্যেক ঈমানদারের কর্তব্য। কোরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তাগুতকে অস্বীকার করা, এ দুটি বিষয় পরস্পরের সাথে অংগাংগীভাবে সংযুক্ত এবং এদের একটি অন্যটির অনিবার্য পরিণতি। আল্লাহ ও তাগুত উভয়ের সামনে একই সাথে মাথা নত করাই হচ্ছে সুস্পষ্ট মুনাফেকি।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাসুল (সা.) মদিনায় ইনসাফভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সন্তুষ্ট চিত্তে সে বিচার ব্যবস্থা মেনে নিয়েছে। কিন্তু কিছু নামধারী মুসলমান-মুনাফিক কুরআনের বিচার ব্যবস্থা মেনে নিতে পারেনি। তারা মুখে দাবি করে—‘কোরআন মেনে নিয়েছি, পূর্ববর্তী সব আসমানি গ্রন্থে বিশ্বাস করি’; কিন্তু নিজেদের মামলা-মোকাদ্দমা পরিচালনার জন্য এমন ব্যক্তি বা আদালতের কাছে যায় যেখানে ইনসাফ নয় অর্থের জোরে রায় পাওয়া যায়। এমন আদালত ও বিচাররককে কোরআনের ভাষায় ‘তাগুত’ বলা হয়েছে।
মুফাসসির ইবনে আবি হাতেম (রহ.) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, আবু বুরদা আসলামি নামে এক গণক ছিল। ইহুদিরা নিজেদের বিরোধ মেটানোর জন্য তার কাছে আসত। ইহুদিদের দেখাদেখি কয়েকজন নতুন মুসলমানও তার কাছে বিচারের জন্য যাওয়া আসা করত। যেহেতু আবু বুরদা আসলামি আসমানি কিতাব বিশ্বাস করত না, তাই ইনসাফ তার বিচারের নীতি ছিল না। ফলে মুনাফিকদের মুখোশ উম্মোচন করে আল্লাহ সুরা নিসার ৬০ নম্বর আয়াত নাজিল করেছেন এবং ওই গণককে তাগুত বলে উল্লেখ করেছেন। (তাফসিরে মাজহারি, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৫৫)
লেখক : চেয়ারম্যান, জামালী তালিমুল কোরআন ফাউন্ডেশন
এবং খতিব, রূপায়ণ টাউন সেন্ট্রাল মসজিদ।