ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরপরই দেশের পাঁচ শতাধিক থানায় হামলা চালিয়ে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়।
এদিকে এসব অবৈধ অস্ত্রের সঙ্গে যোগ হয়েছে গত ১৫ বছরে বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রও। যার বেশির ভাগই রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে।
গত মঙ্গলবারের মধ্যে গোলাবারুদসহ এসব আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বেঁধে দেওয়া সময় শেষে এসব অস্ত্র উদ্ধারে গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসারের সমন্বয়ে যৌথ আভিযানিক দল গঠন করে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত যৌথ অভিযানে কত সংখ্যক অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার এবং বৈধ অস্ত্র জমা পড়েছে তার হিসেব দিতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর।
তবে সূত্রে জানা যায়, দেশের আট বিভাগে ৯ হাজার ১৯১টি বৈধ অস্ত্র থানাগুলোতে জমা পড়েছে। বাকি ১ হাজার ৬৫৪টি জমাযোগ্য বৈধ অস্ত্র এখনও জমা দেওয়া হয়নি।
গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছিল, গত ৫ ও ৬ আগস্ট সারাদেশে ১১ ধরনের মোট ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৩টি উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ২ হাজার ৬৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। গোলাবারুদের মধ্যে লুট হয় বিভিন্ন বোরের ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৪২টি গুলি, যার মধ্যে এখনো উদ্ধার হয়নি ৩ লাখ ২০ হাজার ৬৬০টি। লুট করা ৩১ হাজার ৪৪টি কাঁদানে গ্যাসের শেলের মধ্যে ৮ হাজার ৯০৫টি এখনো উদ্ধার করা যায়নি। সাউন্ড গ্রেনেড লুট করা হয়েছিল ৪ হাজার ৬৯২টি। এরমধ্যে এখনো ২ হাজার ৫৭৬টি উদ্ধার করা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক জানান, ‘সদর দপ্তরের অপারেশনস শাখা থেকে যৌথ অভিযানে লুট হওয়া ও বৈধ অস্ত্র কতগুলো উদ্ধার ও জমা পড়েছে সেই তথ্য তারা এখনো পাননি। ’
পুলিশ সদর দপ্তরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশের লুট হওয়া সব ধরনের অস্ত্র এবং লাইসেন্স নেওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। মঙ্গলবার রাত থেকে জোরেশোরে যৌথ অভিযান শুরু হয়নি। আজ শুক্রবার থেকে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরালো অভিযান চালানো হবে। ’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের শাসনআমল ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের আট বিভাগে ১০ হাজার ৮৪৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে জমা পড়ে ৯ হাজার ১৯১। এখনও লাইসেন্স নেওয়া ১ হাজার ৬৫৪টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি।