নিউজ ডেস্ক:
হত্যার হুমকি পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সেলিনা ইসলাম। তিনি সাত খুনের ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী এবং ওই মামলার বাদী। সেলিনার অভিযোগ, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠজন। তাঁদের লোকজনই হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে নূর হোসেনের স্ত্রী রুমা বেগম গতকাল শুক্রবার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলামের (ছোট নজরুল) পক্ষে গণসংযোগ শুরু করেছেন। নূর হোসেনের স্ত্রীও দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার আসামি। সম্প্রতি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ছোট নজরুল একসময় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের সমর্থক ছিলেন। এখন তাঁকে সমর্থন দিচ্ছেন কারাবন্দী নূর হোসেন। রুমা বেগমের প্রচারে নামা এলাকায় কৌতূহল ও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
এ দুটি ঘটনায় আবার আলোচনায় নূর হোসেন। নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাঁর ক্যাডাররা আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের মধ্যে শুরু থেকেই ২ নম্বর ওয়ার্ড ছিল আগ্রহের কেন্দ্রে। সাত খুন মামলার বাদী ও মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে নাম উল্লেখ করা আসামির নির্বাচন করা নিয়ে সেখানকার মানুষের মধ্যে আশঙ্কাও ছিল। এই আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে সেলিনা ইসলামকে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানো চিঠি।
কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সেলিনা ইসলাম প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে ১৫ ডিসেম্বর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ১৪ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় তাঁর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে ডাকঘরের পিয়ন রেজিস্ট্রি (মোহাম্মদপুর ডাকঘর) ডাকযোগে আসা একটি চিঠি দিয়ে যান। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে সাত খুন মামলা ও নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে স্বামীর মতো তাঁরও একই পরিণতি হবে। তাঁকেও খুন করে গুম করে ফেলা হবে। কে বা কারা চিঠিটি পাঠিয়েছেন তার কোনো উল্লেখ নেই।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. সরাফত উল্যাহ বলেন, জিডির অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ২২ ডিসেম্বর। আর সাত খুন মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে আগামী ১৬ জানুয়ারি। কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুলসহ সাতজন হত্যাকাণ্ডের পর উপনির্বাচনে সেলিনা ইসলাম কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন।
ভোট গ্রহণের দিন যত এগিয়ে আসছে, প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কাও তত বাড়ছে। কাউন্সিলর পদে বোমা, হত্যা ও মাদক মামলার আসামি এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা প্রার্থী হয়েছেন। প্রধান দুই মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাখাওয়াত হোসেন খান এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরাও বলছেন, সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভোটের দিন খারাপ কিছু ঘটতে পারে। নির্বাচন ঘিরে কাউন্সিলর প্রার্থীরা স্থানীয় রাজনীতির মেরুকরণে পড়েছেন।
বিভিন্ন সূত্র বলেছে, সেলিনা ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইকবাল হোসেনের সঙ্গে নূর হোসেনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক অনেক দিনের। নির্বাচনে ইকবালের পক্ষে কাজ করছেন সাত খুন মামলায় সেলিনা ইসলামের করা এজাহারের ২ নম্বর আসামি ইয়াসিন আলী। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সেলিনা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইকবাল নানাভাবে তাঁকে ও তাঁর সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছেন। প্রার্থী হওয়ার পর থেকে ইয়াসিন আলী নানাভাবে সমস্যা তৈরি করছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাছে কারও বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করিনি। তবে নিরাপত্তা চেয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে (সেলিনা) কারা হুমকি দিয়েছেন সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। তিনি নির্বাচনের কাজ করছেন। তাঁকে এর মধ্যে জড়ানোর তো কোনো কারণই নেই।
এদিকে বুধবার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রভাবশালী কাউন্সিলর প্রার্থী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কবির হোসাইন। কবিরের অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কামরুল হাসান ও তাঁর দুলাভাই শাহজাহান হুমকি দিয়ে বলেছেন, তাঁরা তাঁকে (কবির) দেখে নেবেন। তাঁর আশঙ্কা, তাঁকে বা তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউকে হত্যা করা হতে পারে।
অবশ্য কামরুল হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আসা অভিযোগের মধ্যে বেশির ভাগই কাউন্সিলর প্রার্থীদের। আচরণবিধি ভঙ্গ, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাসহ নানা অভিযোগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিষয়টি কমিশন গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
মেয়র প্রার্থীদের গণসংযোগ: বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে রেলগেট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। আর চাষাঢ়ার বিজয়স্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
এরপর সাখাওয়াত ২১ নম্বর ওয়ার্ডের রেললাইন, সমরক্ষেত্র, বাঘবাড়ি, ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফলাফল যা-ই হোক মেনে নেবেন। ধানের শীষের প্রতি গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। এটা ছিনিয়ে নিতে সরকারি দল অপচেষ্টা করতে পারে। তিনি নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
সাখাওয়াতের পক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার চালান।
আইভী বন্দর এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার ও অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার কথা বলেন। তিনি বলেন, ডাম্পিং প্রজেক্ট, শীতলক্ষ্যা সেতু, জিমখানা লেক, বাবুরাইল খাল খননসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া আছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দল, ধর্ম ও জাত নেই। নির্বাচনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে মানুষকে সচেতন হতে হবে।
আইভীর পক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ চৌধুরী ও ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুর রহমান চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচার চালান।