নিউজ ডেস্ক: ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শ্বশুর কর্তৃক জামাইকে বিদেশে পাঠানোর নামে আলমডাঙ্গার মোকামতলা গ্রামে তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা সর্বস্ব হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন। প্রতারণার শিকার ওই তিন ব্যক্তি হলেন- আলমডাঙ্গা উপজেলার মোকামতলা গ্রামের মৃত খেপু ম-লের ছেলে আপিল ম-ল, পারকেষ্টপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে হাসানুজ্জামান ও সদর থানার সুম্ভনগর গ্রামের হাসিবুল বিশ্বাসের ছেলে মুত্তাকিম বিশ্বাস। এ ঘটনায় এলাকায় একাধিকবার গ্রাম্য সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। পরে পাওনা টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগীরা সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার শ্রীকুল গ্রামের মৃত কাটি মল্লিকের ছেলে মিন্টু (৫০) তার স্ত্রী আনুরা (৪৫) ও ঢাকাস্থ বিদেশ পাঠানোর দালাল আবু তালেবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় শ্বশুর মিন্টু ও শ্বাশুড়ী আনুরা থানায় আটক হওয়ার পর কিছুদিন জেলে সাজা ভোগ করে বর্তমানে জামিনে আছে।
মামলার আরজি ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভালো বেতনের চাকরি ও সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি পাঠানোর কথা বলে মিন্টু ও তার স্ত্রী আনুরা ওই তিনজনের কাছ থেকে কয়েক কিস্তিতে ২১ লাখ টাকা নেয়। মিন্টু ও তার স্ত্রী ভুয়া ভিসার কাগজ দেখিয়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখার ১৮০১১২১০০০০৯৭৯২ এই হিসাব নাম্বারের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে ৩ জনের নিকট থেকে ২১ লাখ টাকা গ্রহন করে। টাকা পরিশোধের পরেই বিভিন্নভাবে তাদের বিদেশ পাঠানোর নামে ঘোরাতে থাকে। তারই কিছু দিন পরে দুই নাম্বার কাগজ পত্র দিয়ে তাৎক্ষণিক ঢাকায় নিয়ে যায় দালাল চক্রের সাথে জড়িত আবু তালেব। ফ্লাইট হওয়ার কথায় ঢাকায় যাবার পরেই মিন্টু তার স্ত্রী আনুরাসহ ঢাকাস্থ দালাল আবু তালেব ফোন বন্ধ করে রাখে। বাড়িতে ফিরে ভিসা পরিক্ষা করলে দেখে জাল ভিসা। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা তাঁদের টাকা ফেরত চান। এর পর থেকে স্বামী-স্ত্রী তাঁদের বিদেশে পাঠানোর কথা বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এ নিয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিসও হয়।
হাসানুজ্জামান ও হাসিবুল জানান, বিদেশে যাওয়ার জন্য জমি বিক্রি ও বন্ধক রেখে এবং এনজিও থেকে সুদে টাকা নিয়ে তাঁরা ৭ লাখ টাকা দিয়েছেন। এখন সুদের টাকা পরিশোধ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসারের খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারা আরো বলেন, বিদেশে পাঠানোর কথা বলে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে একাধিকবার সালিস বৈঠক হয়েছে। সুরাহা না হওয়ায় তাঁরা আদালতে মামলা করেছেন।
টাকা নেয়ার বিষয় অস্বীকার করে আনুরা পারভিন বলেন, তারা (ভুক্তভোগী চার ব্যক্তি) আমাকে কোনো টাকা পয়সা দেয়নি। ঢাকার একজন দালাল আবু তালেব নামের এক ব্যক্তিকে টাকাগুলো দিয়েছে অথচ তাঁরা আমাকে টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তাঁর স্বামী মিন্টুও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টাকাগুলো আবু তালেব নিয়েছে।
এই মামলার আলমডাঙ্গা থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই লিয়াকত জানান, এক বছর পূর্বে শ্বশুর কর্তৃক জামাইকে সৌদি পাঠানোর নামে ২১ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে। বর্তমানে তারা করুণ অবস্থার মাধ্যমে দিন পার করছে। আলমডাঙ্গা থানার মামলা চুয়াডাঙ্গা কোর্টে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে।