মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ – وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ ‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। ’(সুরা যিলযাল : আয়াত ৭-৮)।ইসলামি পরিভাষায় যে কোনো কাজ বা কর্মকে আমল বলে।
আর কোনো আমলের গ্রহণযোগ্যতাকে কবুল বা মাকবুল বলা হয়। মানুষের সব আমল বা কর্মগুলো কবুল হবে না। কেন না এ আমলগুলো ভালো-মন্দ দুইভাগে বিভক্ত।
ভালো আমলগুলো কবুল হবে আর মন্দ আমলগুলো কবুল হবে না। মানুষের বড় সম্পদ নেক আমল। পৃথিবীতে যার যত নেক আমল, পরকালে তার তত আনন্দ ও প্রশান্তি। মৃত্যুর পরে একমাত্র নেক আমলই মানুষের কাজে আসবে। তাই মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে, পার্থিব জীবনে থাকা অবস্থায়ই সাধ্যমতো নেক আমলের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে থাকা।তবে আমল কবুল হচ্ছে কি না সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। অনেকের আমলের পরিমাণ অনেক বেশি, কিন্তু আমল হেফাজত ও কবুলের শর্ত না জানার কারণে তার ভাণ্ডারে তেমন কিছু সঞ্চিত হচ্ছে না। খালি থেকে যাচ্ছে আমলের খাতা। তাই নেক আমল কবুল হওয়ার শর্ত সম্পর্কে অবগত হওয়া চাই। নিচে আমল কবুলের পূর্বশর্তগুলো তুলে ধরা হলো।
শিরকমুক্ত ঈমান ছাড়া কোনো আমলই আল্লাহ কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমানে যদি শিরকের মিশ্রণ থাকে, তা হলে ভালো আমলগুলোকেও ধ্বংস করা হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তাদের সমস্ত আমল নিয়ে আমি ধুলোর মতো উড়িয়ে দেব। ’ (সুরা ফুরকান : ২৩)। অবিশ্বাসীদের আমল যত ভালোই হোক, তা আল্লাহ তায়ালা কাছে মূল্যহীন। এ কথাই উচ্চারিত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতের মাঝে। ‘যারা স্বীয় পালনকর্তার সত্তার অবিশ্বাসী তাদের অবস্থা এই যে, তাদের কর্মসমূহ ছাইভস্মের মতো, যার ওপর দিয়ে প্রবল বাতাস বয়ে যায় ধূলিঝড়ের দিন। তাদের উপার্জনের কোনো অংশই তাদের করতলগত হবে না। এটাই দূরবর্তী পথভ্রষ্টটা। ’ (সুরা ইবরাহিম : ১৮)নিয়তের পরিশুদ্ধি
যেকোনো নেক আমলের পূর্বেই নিয়তকে বিশুদ্ধ করে নিতে হবে। কারণ, ‘সব কাজের প্রতিফল কেবল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তিই নিয়ত অনুসারে তার কাজের প্রতিফল পাবে। ’ (বুখারি : ১)বিদআতমুক্ত আমল
বিদআতের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি আমাদের এই দ্বীনের ভেতর এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত। ’ (বুখারি : ২৫৫০)। রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘সবচেয়ে ভালো বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। আর সবচেয়ে ভালো নিয়ম হলো মোহাম্মদ (সা.)-এর নিয়ম। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো (দ্বীনের ব্যাপারে) বিদয়াত, তথা নতুন কিছু সৃষ্টি করা। আর প্রতিটি বিদয়াত হলো ভ্রষ্টতা। ’ (মুসলিম : ২০৪০)ইখলাসপূর্ণ আমল
আমলের মধ্যে ইখলাস বা একনিষ্ঠতা থাকা চাই। অর্থাৎ আমলটি যেন কেবল আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্যই হয়। অন্য কোনো উদ্দেশ্য যেন না হয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তাদেরকে এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। ’ (সুরা বাইয়েনা : ৫)মানুষের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সাদকা, উত্তম চরিত্র গঠন করা ইত্যাদি ভালো কর্ম বা কাজ হিসেবে পরিচিত। পক্ষান্তরে মানুষের খারাপ বা মন্দ কর্মের মধ্যে রয়েছে সুদ, ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি, জেনা-ব্যভিচার, বেপর্দা, মদ-জুয়া ও অসৎচারিত্রিক কাজ।