গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে দগ্ধ কমেডিয়ান আবু হেনা রনি শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন শনিবার সকালে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আবু হেনা রনির শ্বাসনালি একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাকে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলেন, আবু হেনা রনি শঙ্কামুক্ত নন। চিকিৎসক ডা. এস এম আইউব হোসেন জানিয়েছেন ‘এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’ তার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। আমাদের আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে।’
আবু হেনা রনির সঙ্গে দগ্ধ জিল্লুর রহমান (৩২) নামে আরেকজন যুবককেও আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার শরীরের ১৯ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
আবু হেনা রনি একাধারে স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান, অভিনেতা, উপস্থাপক ও মডেল। তিনি ২০১১ সালে ভারতীয় টিভি চ্যানেল জি বাংলার ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার্স ৬’-এ বিজয়ী হন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) মো. আবু সায়েম নয়ন জানান, বেলুন বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত পাঁচজনের মধ্যে রনি ছাড়া অন্যরা পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল)। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে গাজীপুর জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে একটি অনুষ্ঠানে এ দুর্ঘটনায় আবু হেনা রনি ছাড়াও আরও চারজন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে রনিসহ তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বার্ন ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়। রনি ও জিল্লুর ছাড়া চিকিৎসাধীন অপরজনের নাম মোশাররফ হোসেন।
জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম আহত রনির পাঁচ শতাংশ পুড়েছে এবং অন্যরা সকলেই আশঙ্কামুক্ত দাবি করলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন রনির ২৫ শতাংশ এবং জিল্লুর ১৯ শতাংশ পুড়েছে। তাদের দুজনের শ্বাসনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যরা আশঙ্কামুক্ত।
জিএমপির কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় জিএমপির চতুর্থ বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানের মঞ্চের পূর্ব পাশে ছোট উদ্বোধন মঞ্চে উড়ানোর জন্য কিছু গ্যাস বেলুন নেওয়া হয়। প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও সেগুলো উড়েনি। পরে পায়রা উড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য অতিথিরা অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চের দিকে চলে যান। সেখানে গিয়ে কেক কাটেন এবং বক্তব্যে অংশ নেন।
এক পর্যায়ে বেলুনগুলো নিয়ে যাওয়া হয় উদ্বোধন মঞ্চের পেছনে। কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। উদ্বোধন মঞ্চের পেছনে সবগুলো বেলুনই বিস্ফোরিত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। এ সময় আহতরা নিচে লুটিয়ে পড়েন। সহকর্মীরা দ্রুত আহতদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
জিএমপি কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব আখতার হোসেন। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
এদিকে বেলুন বিস্ফোরণে আহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে শুক্রবার রাতেই গাজীপুর মহানগর পুলিশের ডিসি (উপ-কমিশনার, উত্তর) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- এডিসি (উত্তর) রেদোয়ান আহমেদ, এসি প্রসিকিউশন মো. ফাহিম আশজাদ ও গাজীপুর সদর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।