নিউজ ডেস্ক:
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান এশিয়া কাপের সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে আসরের ফাইনালে খেলার আশা বাঁিচয়ে রাখলো টাইগাররা। পক্ষান্তরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিল আফগানিস্তান।সুপার ফোরে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালেই ফাইনালের টিকিট পাবে মাশরাফির দল। বাংলাদেশের এই জয়ে প্রথম দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করলো ভারত। কারন দিনের অন্য ম্যাচে পাকিস্তানকে ৯ উইকেটে বিধ্বস্ত করেছে ভারত।
আবু ধাবিতে প্রথমে ব্যাট হাতে নেমে ভালো শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৮ রানের মধ্যে দুই ব্যাটসম্যানকে হারায় টাইগাররা। ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ৬ ও মোহাম্মদ মিথুন ১ রান করে ফিরেন। দু’জনে যথাক্রমে আফতার আলম ও মুজিব উর রহমানের শিকারে পরিনত হন।
এরপর শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যান আরেক ওপেনার লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। ৭৯ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন তারা। মারমুখী মেজাজে রান করা লিটন আউট হন তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৩টি চারে ৪৩ বলে ৪১ রান করা লিটন রশিদ খানের বলে এহসানউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন।
বড় ইনিংসের আভাস দিয়ে ৩৩ রানে থেমে যান মুশফিকুর। ২টি চার ও ১টি ছক্কা ৫২ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান মুুশি রান আউটের ফাঁদে পড়েন। । মুুশফিকের আউটের আগে উইকেটে গিয়ে ব্যাট হাতে রানের খাতাই খুলতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ২ বল খেলে শুন্য রানে ফিরেন তিনি। এ পর্যায়ে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের আশাও অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়।
তবে ষষ্ঠ উইকেটে দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন এশিয়া কাপ খেলতে হঠাৎই গতকাল দলের সাথে যোগ দেয়া ইমরুল কায়েস। জুটিতে তার সঙ্গী হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আফগানিস্তানের বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকেন তারা। ফলে দু’শ রানের কোটা পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ।
ইমরুল ও মাহমুুদুল্লাহ দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। ইমরুল ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম ও মাহমুুুদুল্লাহ ২০তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। শেষ পর্যন্ত দু’জনই থেমে যান সত্তরের ঘরে। মাহমুদুল্লাহ আউট হলেও ইমরুল অপরাজিত থাকেন। মাহমুদুল্লাহ ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৪ রান করে আফতাবের শিকার হলেও ইমরুল ৬টি চারে ৮৯ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষদিকে, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ১০ ও মেহেদি হাসান অপরাজিত ৫ রান করেন। ফলে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪৯ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের আফতাব আলম ৩টি উইকেট নেন।
২৫০ রানের টার্গেটে শুরুটা ভালো করতে পারেনি আফগানিস্তানও। ২৬ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারায় তারা। ওপেনার এহসানউল্লাহ ৮ রান করে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার হন। রহমত শাহ ১ রান করে রান আউটের ফাঁদে পড়েন।
দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া আফগানিস্তানকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদ ও হাসমতউল্লাহ শাহিদি। নিজেদের পরিকল্পনায় সফল হয়েছেন তারা। ধীরলয়ে খেলে ১০৪ বলে ৬৩ রান যোগ করেন তারা। শেহজাদকে থামিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন অফ-স্পিনার মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৩ রানে মাহমুদুল্লার বলে থামেন শেহজাদ। তার ৮১ বলের ইনিংসে ৮টি চার ছিলো।
দলীয় ৮৯ রানে শেহজাদ ফিরে যাবার পর আবারো বড় জুটি চেষ্টা করেন শাহিদি ও অধিনায়ক আসগর আফগান। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলার চেষ্টা করেন তারা। এতে ৩৮তম ওভারে দেড়শ রান কোটা স্পর্শ করে আফগানিস্তান। ৪০তম ওভারের চতুর্থ বলে আসগরকে বিদায় দিয়ে জুটি ভাঙ্গেন বাংলাদেশ দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২টি চারে ৪৭ বলে ৩৯ রান করেন আসগর। চতুর্থ উইকেটে ৯০ বলে ৭৮ রান যোগ করেন শাহিদি ও আসগর। এই জুটি গড়ার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও চলমান টুর্নামেন্টে টানা তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন শাহিদি।
আসগরকে শিকার করার কিছুক্ষণ পর শাহিদিকেও তুলে নেন মাশরাফি। ৫টি চারে ৯৯ বলে ৭১ রান করেন শাহিদি। শাহিদি যখন ফিরেন তখন জয়ের জন্য ৩৯ বলে ৫৮ রান প্রয়োজন ছিলো আফগানিস্তানের। উইকেট হাতে ছিলো ৫টি।
এ সময় সামিউল্লাহ শেনওয়ারির সাথে মারমুখী মেজাজে ৩০ বলে ৪৬ রান দলকে উপহার দেন আফগানিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী। ফলে শেষ ২ ওভারে ১৯ রান দরকার পড়ে আফগানদের। ৪৯তম ওভারে সাকিবের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে ম্যাচের লাগাম টেনে ধরেন নবী। তবে পরের বলেই নবীকে থামান সাকিব। ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৮ বলে ৩৮ রান করেন নবী। ফলে শেষ ওভারে ৮ রান দরকার পড়ে আফগানিস্তানের।
ম্যাচের শেষ ওভার মুস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন টাইগার অধিনায়ক। প্রথম ডেলিভারি থেকে ২ রান নেন রশিদ খান। পরের বলেই রশিদকে নিজের হাতেই তালুবন্দি করেন ফিজ। এরপর তৃতীয় বলে ১, চতুর্থ বলে শুন্য ও পঞ্চম বলে ১ রান দিয়ে শেষ ডেলিভারিতে আফগানিস্তানের ৪ রান প্রয়োজন দাড় করান মুস্তাফিজুর। নিজের শেষ ডেলিভারি থেকে কোন রানই দেননি ফিজ। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২৪৬ রানে থেমে যায় আফগানরা। ৩ রানে ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্টে নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রাখে বাংলাদেশ।
ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে মাশরাফি-মুস্তাফিজ ২টি করে এবং সাকিব-মাহমুদুল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ।
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ঐ ম্যাচ জিতলেই ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হবে বাংলাদেশ।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
লিটন দাস ক এহসানউল্লাহ ব রশিদ ৪১
নাজমুল হোসেন ক রহমত ব আফতাব ৬
মোহাম্মদ মিথুন এলবিডব্লু ব মুজিব ১
মুশফিকুর রান আউট (নবী/রশিদ) ৩৩
সাকিব রান আউট (শেনওয়ারি) ০
ইমরুল কায়েস অপরাজিত ৭২
মাহমুুদুল্লাহ ক রশিদ ব আফতাব ৭৪
মাশরাফি ক শেহজাদ ব আফতাব ১০
মেহেদি হাসান অপরাজিত ৫
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-২, ও-৪) ৭
মোট (৭ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৪৯
উইকেট পতন : ১/১৬ (শান্ত), ২/১৮ (মিথুন), ৩/৮১ (লিটন), ৪/৮১ (সাকিব), ৫/৮৭ (মুশফিকুর), ৬/২১৫ (মাহমুদুল্লাহ), ৭/২৩৬ (মাশরাফি)।
আফগানিস্তান বোলিং :
আফতাব : ১০-০-৫৪-৩ (ও-১),
মুজিব উর রহমান : ১০-০-৩৫-১ (ও-১),
নাইব : ৯-০-৫৮-০ (ও-২),
নবী : ১০-০-৪৪-০ (ও-২),
রশিদ : ১০-০-৪৬-১,
শেনওয়ারি : ১-০-৯-০।
আফগানিস্তান ব্যাটিং :
শেহজাদ বোল্ড ব মাহমুদুুল্লাহ ৫৩
এহসানউল্লাহ ক নাজমুল ব মুস্তাফিজুর ৮
রহমত রান আউট (সাকিব) ১
শাহিদি বোল্ড ব মাশরাফি ৭১
আসগর ক মাহমুদুল্লাহ ব মাশরাফি ৩৯
নবী ক নাজমুল ব সাকিব ৩৮
শেনওয়ারি অপরাজিত ২৩
রশিদ ক এন্ড ব মুস্তাফিজুর ৫
নাইব অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-৫) ৮
মোট (৭ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৪৬
উইকেট পতন : ১/২০ (এহসানউল্লাহ), ২/২৬ (রহমত), ৩/৮৯ (শেহজাদ), ৪/১৬৭ (আসগর), ৫/১৯২ (শাহিদি), ৬/২৩৮ (নবী), ৭/২৪৪ (রশিদ)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মাশরাফি : ১০-০-৬২-২ (ও-২),
নাজমুল : ৮-০-২৯-০ (ও-১),
মুস্তাফিজুর : ৯-১-৪৪-২ (ও-২),
মিরাজ : ৯-১-৩৬-০,
সাকিব : ৯-০-৫৫-১,
মাহমুদুল্লাহ : ৫-০-১৭-১।
ফল : বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)।