নিউজ ডেস্ক:
মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের রিহায়ারিংয়ের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (শ্রম) মো. সায়েদুল ইসলাম। গতকাল সোমবার দুপুরে মিশনের হল রুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমার্শিয়াল উইং ধনঞ্জয় কুমার দাস, শ্রম শাখার দ্বিতীয় সচিব মো. ফরিদ আহমেদ।
সায়েদুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালয়েশিয়া সফরের সময় দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিকর্মীদের বৈধতা প্রদানের জন্য মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অবৈধ কর্মীদের বৈধতা প্রদানের লক্ষ্যে মালয়েশিয়া সরকার ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি হতে রিহায়ারিং কর্মসূচি চালু করে। প্রথমে এর মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও শ্রমবাজারের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে মালয়েশিয়া সরকার তা ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রচেষ্টার ফলে ২০১৭ সালের শুরুতেই মালয়েশিয়া সরকার রিহায়ারিং কর্মসূচির মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। রিহায়ারিং কর্মসূচিতে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের সংখ্যা সর্বাধিক।
অবৈধ যেসব অভিবাসী লিগ্যাল পোর্ট দিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেননি তাদের রিহায়ারিং কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবার কোনো সুযোগ ছিল না। যার ফলে অনেক বাংলাদেশি এ সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। সে কারণে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনে আলোচনা হয়। উক্ত আলোচনা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় চলমান রিহায়ারিং কর্মসূচির সহায়ক হিসেবে অবৈধ শ্রমিকদের সাময়িক বৈধতা হিসেবে এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) করার সুযোগ দিয়েছিল মালয়েশিয়া সরকার।
ই-কার্ড কর্মসূচির মেয়াদ ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ই-কার্ড কর্মসূচিতে রেজিস্টার্ড হলে দীর্ঘমেয়াদে বৈধতাপ্রাপ্তির জন্য প্রত্যেক কর্মীকে অবশ্যই রিহায়ারিং কর্মসূচিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ই-কার্ড ও রিহায়ারিং কর্মসূচি সফল করতে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। হাইকমিশন হতে শ্রমিকদের সচেতন করতে প্রচারপত্র বিলি করা হয়। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হয়। কমিউনিটি সভা করে কর্মীদের সচেতন, অবহিতকরণ ও উদ্বুদ্ধ করা হয়। নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভাসমূহে তাদের আওতাধীন সব অবৈধ কর্মীদের বৈধতা প্রদানের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার বিদেশি অভিবাসী ই-কার্ড সংগ্রহ করেছেন যার মেয়াদ থাকবে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত। ই-কার্ডপ্রাপ্ত অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা সর্বাধিক। ই-কার্ডপ্রাপ্তির পর বিদেশিকর্মীরা স্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার লক্ষ্যে রিহায়ারিং প্রোগ্রামের আওতায় চলে আসবেন।
ই-কার্ড নেয়ার সময়সীমা শেষ হলেও অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সময়সীমা শেষ হয়নি। যারা এখনও বৈধ হতে পারেননি তারা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের মাধ্যমে বৈধ হতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে মালয়েশিয়া সরকার ই-কার্ডের সুযোগ দিয়েছিল। ই-কার্ড নেয়া কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগও নিয়েছে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক। এরপরও যারা এখনও অবৈধ হিসেবে অবস্থান করছেন তাদের আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত রিহায়ারিং কর্মসূচিতে নিবন্ধনের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ কাজে লাগানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে যেসব বাংলাদেশি ই-কার্ড পেয়েছেন অথবা রিহায়ারিং কর্মসূচিতে রেজিস্টার্ড হয়েছেন তাদের মধ্যে যাদের পাসপোর্ট নাই, তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন হতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বৈধতা অর্জনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
এদিকে অবৈধ বিদেশিকর্মী ধরার তৃতীয় দিন ছিল গতকাল। এ ধরপাকড় নিয়ে নিয়োগকর্তারাও উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। গ্রেফতারের ভয়ে ব্যাপক সংখ্যক বৈধ ও অবৈধকর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন। কারখানার মালিকরা শঙ্কিত যে, তারা আর কাজে আসবে না যতক্ষণ না ধরপাকড় বন্ধ হবে। ফলে নির্মাণ ও এসএমই খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মাস্টার্স বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট ফো চেক লি বলেন, ধরপাকড়ের কারণে কন্সট্রাকশন লেবাররা কাজে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এটা উৎপাদনে বাধা, এতে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি কনস্ট্রাকশন খাতের ক্ষতি হচ্ছে। সরকার যখন ই-কার্ড করার মেয়াদ বাড়ালো না তখন আমরা সকল কন্ট্রাক্টরকে বলেছি দ্রুত রি-হায়ারিং সম্পন্ন করতে।
তিনি বলেন, আমাদের সদস্যরা রিহায়ারিং করতে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। রেইডের সময় কাজ বন্ধ করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মারা যাব। এমনিতে দেরিতে ডেলিভারি দেবার কারণে ক্ষতির মধ্যে আছি। এখন আরও দেরি হবে এবং ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তাফার আলী আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, বৈধ বিদেশিকর্মীদের ভয়ের কিছু নাই। হোয়াটসআপ মেসেজে তিনি বলেন, ‘বৈধকর্মীদের ভয়ের কিছু নাই। কেন তারা ভয় পাচ্ছে?’ কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, ধরপাকড়ের সময় বৈধ ও অবৈধ নির্বিশেষে সকলকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত তিনদিনে এক হাজার ৪০ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫১৫ জন বাংলাদেশি।