আটলান্টার একটি লাইব্রেরি!

0
51

নিউজ ডেস্ক:

আপনি যদি কখনও যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা শহরে আসেন, তাহলে কোনো না কোনো বাংলাদেশি নিশ্চিতভাবে আপনাকে গ্গ্নোবাল মলে নিয়ে যেতে চাইবে। এই প্রশস্ত বিপণিকেন্দ্রের দোকানপাট সবই উপমহাদেশীয়। শাড়ি-গয়না, গ্রোসারি, পান-সুপারির দোকানের পাশাপাশি রয়েছে একগুচ্ছ দেশীয় খাবার দোকান, এমনকি বাংলাদেশি রেস্তোরাঁও_ সেখানে গরম গরম মোগলাই পরোটা খেয়ে স্বদেশ বিরহের যন্ত্রণা লাঘব করতে পারেন।

এই বিপণিবিতানের এক তলার গোলকধাঁধার পেছনের দিকে আয়োজন খানিকটা ভিন্ন। সেখানে ভরতনাট্যম বা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ক্লাস আর বাচ্চাদের কোচিং ক্লাসের ফাঁকে রয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেটা যুক্তরাষ্ট্রে কেন, আমার মনে হয় বাংলাদেশেও দুর্লভ। বাংলাদেশে আজকাল ব্যক্তিগত উদ্যোগে লাইব্রেরি চালু আছে কি? অথচ আটলান্টায় প্রায় তিন হাজার বাংলা বই নিয়ে গঠিত হয়েছে সেবা বাংলা লাইব্রেরি। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনাবলি, প্রবন্ধের বই, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস, আরজ আলী মাতব্বরের বই, শারমিন আহমদের লেখা তাজউদ্দীন আহমদের জীবনী_ নানা স্বাদের বই চারপাশের শেলফে সারিবদ্ধভাবে সাজানো আছে। উত্তর আমেরিকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলা বইয়ের এমন সম্ভার আছে বলে জানি না।

সেবা লাইব্রেরির মূল কর্মীদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এই ছোট্ট দলটির সদস্যরা ধর্ম, রাজনৈতিক আর রাষ্ট্রীয় পরিচয় নির্বিশেষে বাংলা সাহিত্য আর সংস্কৃতির টানে একত্র হয়েছেন। সেবা লাইব্রেরির দু’জন মূল সংগঠকের কথা ধরা যাক। হারুনুর রশিদ সিলেটের লোক, কাজ করেন তথ্যপ্রযুক্তিতে, তবে তার নেশা নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন। তারই নেতৃত্বে লাইব্রেরির পত্তন। তার সহযোগী রুদ্রশঙ্কর একাধারে কবি, গীতিকার ও ডাকসাইটে বিজ্ঞানী। রুদ্র পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত।

সেবা বাংলা লাইব্রেরির ঘরোয়া সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের নজরুলসঙ্গীত শিল্পী দম্পতি খায়রুল আনাম শাকিল আর কল্পনা আনাম। কিছুদিন আগে শারমিন আহমদ এসে তার পিতা তাজউদ্দীন আহমদের জীবনী থেকে পাঠ করে যান এই লাইব্রেরিতে।

প্রবাসে সংস্কৃতিচর্চার অন্তরায় বহুবিধ। কর্মব্যস্ততা ও পারিবারিক দায়িত্বের ফাঁকে সময় করা কঠিন, সাংগঠনিক অর্থকষ্টও আছে। বহু শ্রমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে লোকসমাগম ঘটানো সহজ নয়। বাংলাদেশি প্রবাসী সমাজের মানুষ অনুষ্ঠানে আসে যতটা সংস্কৃতির টানে, তার চেয়ে বেশি সামাজিকতার আকর্ষণে। অর্থাৎ কে কাকে চেনে, কার সঙ্গে কত মানুষের অন্তরঙ্গতা, এসব ব্যাপারই বড় হয়ে দাঁড়ায়।

তবে সব উদ্যোগের মূলকথা লাইব্রেরির ব্যবহার বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে সেবা লাইব্রেরির বিকাশ আশানুরূপ হয়নি_ সেটা লাইব্রেরির আর সবার মতো আমারও গভীর মর্মপীড়ার কারণ। প্রবাসজীবনে ইন্টারনেটে দেশের খবরের খুঁটিনাটি জানার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের ক্লান্তি নেই, নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও কমবেশি অনেকেরই যাতায়াত; কিন্তু লাইব্রেরিতে ঢুঁ মারতেই অনীহা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কী, তা আজও আমরা খুঁজছি।
আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র