নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী সাধারণ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি ঐক্য জোরদার করার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি গতরাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্যারিস লা গ্রান্ডে আওয়ামী লীগের ফ্রান্স শাখা আয়োজিত প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করবো কারণ, জনগণ আমাদের পক্ষে রয়েছে। জনগণ আমাদের ভোট প্রদানের জন্য প্রস্তুুত। তাই আমাদের সাবধান থাকতে হবে, যাতে কেউ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো’র আমন্ত্রনে ওয়ান প্লানেট শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গত সোমবার তিনদিনের সরকারি সফরে এখানে এসেছেন।
দলের নেতা-কর্মীদের দলকে শক্তিশালী করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্যাগের মাধ্যমেই দলের সর্বস্তরে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। দলের মধ্যে বিভাজন ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে কিন্তুু সকলে একতাবদ্ধ থাকলে সে সুযোগ তারা পাবে না।
তিনি পুননির্বাচিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসবো ইনশাল্লাহ এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত থাকবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেনসহ ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রায় ৬ বছর পর অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনায় যোগ দেয়।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ’৭৫ এর পর পিছিয়ে দেয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করা শক্তি যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকারও আহবান জানান।
তিনি সন্ত্রাস, হত্যা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, তাদের লুটপাট, খুন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সজাগ করতে হবে। তাদের ক্ষমতায় আসা মানে আবার মানুষ খুন করা, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, লুটপাট করা। প্রবাসীদের এ সময় দেশে থাকা আত্বীয়-স্বজনদের বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করারও আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
দেশ স্বাধীন হবার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও ৩০ বছর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দেশ শাসন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অথচ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশের মানুষ উন্নয়নের প্রকৃত স্বাদ লাভ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের চ্যাম্পিয়ন দাবি করে অথচ তারা আসলে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে পুনর্বাসিত করেছিল এবং দেশে কারফিউয়ের গণতন্ত্র চালু করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করে পুরো একটি প্রজন্মকেই দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানা থেকে বিরত রাখে। তারা বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ হিসেবে তাদের মেমোরি রেজিস্টারে এই ভাষণের অর্ন্তভূক্তি সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
জাতির জীবনে ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট না এলে বাংলাদেশ অনেক অগেই উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যেত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বে একটি উন্নত – সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেত।
জাতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে সুইডেনে প্রথম সভা হয়েছিল যেখানে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, প্রবাসীরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এবং দেশকে মুক্ত করায় সর্বদা ভূমিকা পালন করে এবং দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখে। শেখ হাসিনা বিশেষ করে সাবেক সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তাদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের সহযোগিতা সবসময়ই তাঁকে (শেখ হাসিনা) শক্তি ও সাহস জোগায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো বাংলাদেশকে বিশ্বে ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে পরিচয় করায় কিন্তু এখন বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশকে মর্যাদার চোখে দেখে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ রুখতে পারবে না বলেও তিন উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’কে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। যা তাঁর সরকারের আদর্শ, যা বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র দূরীকরণে সহায়তা করছে।
দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তুু দেশ দারিদ্র মুক্ত হলেই কেবল দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য, শিক্ষা, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা এবং হাউজিংয়ের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
তাঁর সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের সম্পর্ক প্রতিটি ক্ষেত্রেই আরো জোরদার হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটও ফ্রান্সের একটি কোম্পানী তৈরী করছে এবং ২০১৮ সালের মার্চে এটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার গ্রামীণ অর্থনীতি জোরদার করার লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের উন্নয়নে সমান গুরুত্ব দিয়েছে। বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে যা অর্থনৈতিক সাচ্ছন্দের উপরই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। দেশের প্রত্যেক ঘরে ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের আলো পৌঁছবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই জনগণ উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারে। আর বিএনপি তাদের নিজেদের ভাগ্য গড়ে তুলতেই ক্ষমতায় আসে। ভোটচুরি, দুর্নীতি, ব্যাংকের টাকা লোপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ তখন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার এই মেয়াদকালেই দেশের অবশিষ্ট উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে। দেশের অগ্রগতির স্বার্থে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জললাভ করতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
(বাসস)