নিউজ ডেস্ক:
সফটওয়্যার ও আইটি সেবা খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাজেটে ৪০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা রাখার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার।
বুধবার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় বেসিসের পক্ষে তিনি দাবি জানান। এ সময় বেসিসের পক্ষে তিনি আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কে মোট ১৫টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
বেসিস সভাপতি মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত থেকে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফটওয়্যার ও আইটি সেবা খাতের কোম্পানিগুলোকে রপ্তানিতে উৎসাহিতকরণসহ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রপ্তানিতে ক্যাশ অর্থ প্রণোদনা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ তাই এই খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে ৪০ শতাংশ নগদ অর্থ প্রণোদনা রাখার দাবি তিনি।
তিনি বলেন, ‘ভ্যাট আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে সব পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ভ্যাট মওকুফ দাবি করছি। সুলভে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে এনটিটিএনের পক্ষে থেকে আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি করছি।’
এ ছাড়াও ইন্টারনেট মডেম, ইন্টারনেট ইন্টারফেস কার্ড, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার, সার্ভার, ব্যাটারিসহ সকল ইন্টারনেট ইকুইপমেন্টের ওপর বর্তমান আরোপিত ২২ দশমিক ১৬ শতাংশ ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন মোস্তফা জব্বার। একইসঙ্গে বিদেশি উৎপাদিত ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর শুল্ক আরোপ করে দেশীয় যন্ত্রাংশ /কাঁচমালকে সম্পূর্ণ শুল্ক ও ভ্যাট মুক্ত, মোবাইল এক্সেসরিজের উপরে ন্যূনতম শুল্কহার ধার্য, গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদির আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ রাখাসহ অপটিক্যাল ফাইবার ও ফাইবারস বান্ডল ও ক্যাবলসের ওপর হতে শুল্ক প্রত্যাহার দাবি করেন তিনি।
বেসিস সভাপতি বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বিষয় হচ্ছে যদি দেশে ব্রডব্র্যান্ডের প্রসার শতকরা ১০ ভাগ হয় তাহলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ১ ভাগ। দেশে ইন্টারনেটের ওপর দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট-শুল্ক বসিয়ে একটি ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি করে রেখেছে। এটি জিডিপির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। দেশে ২ কোটি ৩৩ লাখ ফেসবুক ব্যবহার করে। এর মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ ঢাকা শহর ও এর আশপাশে ব্যবহার করে। মাত্র ১৩ লাখ সারা দেশে ব্যবহার করে। এ ধরনের ডিজিটাল বৈষম্যের একটি অন্যতম কারণ ভ্যাট। ভ্যাটের কারণে সাধারণ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না। তাদের কাছে ইন্টারনেটের স্পিড পৌঁছায় না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইন্টারনেট সভ্যতার মধ্যে বসবাস করবে। তারা যদি সহজলভ্য ইন্টারনেট না পায় তাহলে ইন্টারনেট সভ্যতার ভাঙা-চোরা রাস্তায় তারা বসবাস করবে। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন জরুরি।’
মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘আমরা যখন কেবল কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে প্রবেশ করেছি তখন আমরা প্রযুক্তিতে আমদানিনির্ভর ছিলাম। এখন আমাদের সময় হয়েছে উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশে প্রবেশের। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা উৎপাদক ও রপ্তানিকারক হতে চাই। আমরা যদি বিদেশ থেকে কোনো ডিজিটাল পণ্য উৎপাদন করে নিয়ে আসি তাতে যে শুল্ক হয় দেশে উৎপাদন করলে তার শুল্ক ১০ গুণ বেশি পড়ে যায়। সেটা স্মার্টফোন হোক আর কম্পিউটার হোক। আগামী বছরটা উৎপাদক হওয়ার বছর হোক, আশা করছি। এখন সময় হয়েছে বাইরের আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার।’
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এনবিআর সদস্য (মূসকনীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. পারভেজ ইকবাল (করনীতি), মো. লুৎফর রহমান (শুল্কনীতি) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।