নিউজ ডেস্ক:
পথে পথে গান গেয়ে ভিক্ষা করেন ভারতের এই দু’জন অন্ধ গায়ক। স্ত্রীর হাত ধরে এগিয়ে যান ৭৬ বছরের চিত্তরঞ্জন দেবনাথ। আর ৫৫ বছরের শ্রীহরি দাস একাই চলেন, হাতে দোতারা নিয়ে। তাঁদেরই এ বার স্টুডিওতে ঢুকিয়ে দিল ছন্দনীড়। শিলচরের এক সাংস্কৃতিক সংস্থা।
‘অডিও-ভিডিও অ্যালবাম’! হেডফোন পরার পরেও বিশ্বাস হচ্ছিল না শ্রীহরি-চিত্তরঞ্জনের, ‘‘আমাদের গান মানুষ সিডি চালিয়ে শুনবে!’’ পরে স্টুডিওর রেকর্ডিং ব্যবস্থা তৈরি হলে গান শুরু করতে বলা হল তাঁদের। দু’জনে এক সঙ্গে কেঁদে ওঠেন। কান্না থামিয়ে যখন গান ধরলেন, সবাই বিস্মিত। দুই শিল্পীর কেউই অচেনা নন। কিন্তু এ যে নতুন করে চেনা!
একে একে গেয়ে গেলেন দেহতত্ত্ব, বাউল, গুরুভজন মিলিয়ে দশটি গান। জালালউদ্দিন, রাধারমন দত্তের গানের সঙ্গে একটি শ্রীহরি দাসেরই রচনা ও সুর করা। দোতারা বাজিয়ে তিনি গাইলেন নিজের গান, ‘বন্ধু আমায় দিল প্রেমজ্বালা, প্রাণসখি’।
দু’জনেরই বয়স বাড়ছে। আর পথচারীদের আকৃষ্ট করতে সারাদিন যে রকম উঁচু স্কেলে গাইতে হয়, আর কত দিন গলা ধরে রাখতে পারবেন, সেই ভাবনা থেকেই ছন্দনীড়-এর শীর্ষকর্তা ভাস্কর দাস ও পার্থ শীলের এই উদ্যোগ। তাঁদের নিয়ে এটি অবশ্য প্রথম কাজ নয় এই সংস্থার। মঞ্চে যাতে তাঁরা শিল্পীর মর্যাদায় গাইতে পারেন, বছর দুয়েক আগে ভাস্করবাবুরাই তার সুযোগ করে দেন। আবার ভিক্ষের টাকায় একটুকরো জমি কিনতে সক্ষম হলেও ঘর বানানোর টাকা জুটছিল না। ছন্দনীড়ই টিন কিনে দেয়, বাড়ির পাঁচিল তৈরির ব্যবস্থা করে। সংস্থাটি জানায়, অ্যালবাম তৈরির যাবতীয় খরচ তারাই বহন করবে। সিডি বিক্রির পুরো টাকাটাই দুই শিল্পীকে ভাগ করে দেওয়া হবে। শ্রীহরি বলেন, ‘‘টাকার জন্য ভাবছি না। আমাদের গলা রয়ে গেল! আমাদের মৃত্যুর পরেও মানুষ আমাদের গান শুনবেন !
সূত্র: আনন্দবাজার।