অ্যান্ডরয়েড ডিভাইস কে রুট করা একটি আবশ্যিক ব্যাপার যার দ্বারা আপনার শখের ডিভাইসের ব্যবহারিক নতুন উপযোগ তৈরি করা হয়। এটি আপনার অ্যান্ডরয়েড ডিভাইসটির সেই সব সুবিধা সমূহ আনলক করে যা মূলত অ্যাপেলের আইওএস (iOS) এবং অ্যান্ডরয়েডের মাঝে পার্থক্য বিশেষ। একটি রুট করা অ্যান্ডরয়েড ডিভাইস এর পুর অপারেটিং সিস্টেম টাই আপনি পালটে দিতে পারেন।
তা এত সুবিধা যখন আছে, তবে শুরু থেকেই কেন আপনার অ্যান্ডরয়েড ডিভাইসটি রুট করে দেওয়া হয় না? এমনকি আপনি যদি গুগল এর Nexus 4 অথবা 7 ক্রয় করেন, আপনাকে নিজে থেকেই রুট করতে হবে। কিন্তু ব্যাপারটা কি? এর পিছনে কি কোন যোগ্য কারণ আছে, নাকি আছে আমাদের বোঝার বাইরে থাকা কোন ব্যাবসায়িক পলিসি?
অ্যান্ডরয়েডের অন্যতম একটি সুবিধা হচ্ছে আপনার ডাউনলোড করা প্রতিটি অ্যাপ চালু করলে এটি এর গণ্ডিতে বেঁধে তা চালনা করে। আপনি যখন কোন অ্যাপ আপনার ডিভাইসটিতে ডাউনলোড করেন, তখন আপনি অ্যান্ডরয়েড এর বাঁধা-ধরা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে একে চালাচ্ছেন।
এটিই হচ্ছে আপনার অ্যান্ডরয়েড ডিভাইস এর Permission লিস্ট – সেই সব এলাকাগুলোকে নির্দেশ করে যা আপনার ডাউনলোড করা অ্যাপ অ্যাক্সেস করতে পারবে। একে তুলনা করুন একটি অফিস কম্পিউটার এর মত। যদি আপনার IT সার্ভিস কিছু ওয়েবসাইট বা সার্ভিস বন্ধ করে রাখে, আপনি এই ব্যাপারে তেমন কিছুই করতে পারেন না।
এই জিনিসটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মোটামুটি প্রয়োজনীয়। অ্যান্ডরয়েড এর অ্যাপস গুলোকে গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখা হয় যাতে এগুলো আপনার ডিভাইস এর অনাকাঙ্ক্ষিত এলাকা ঘুরে তথ্য চুরি করতে না পারে। যা পচা অ্যাপগুলোর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখে। (অন্তত এমনটাই বলা হয়!)
রুট করার মাধ্যমে আপনার ডিভাইসের এই নিরাপত্তা বেষ্টনীটি আর থাকে না। আর এর ফলে অ্যাপ গুলো আপনার ডিভাইসের প্রায় যেকোনো অংশে যাতায়াত করতে পারে। খুব ভাল কথা না, কি বলেন?
রুট করার মাধ্যমে কেবল পচা অ্যাপগুলোই স্বাধীন হয়ে যায় না। এর মাধ্যমে অ্যান্ডরয়েড এর সিস্টেম ফাইল গুলো উন্মুক্ত হয়ে যায় আপনার ডিভাইস এর সবচেয়ে বড় শত্রুর কাছে – যা আপনি নিজেই।
উইন্ডোজ ৯৫/৯৮ এর দিন গুলোতে আপনি অপরিহার্য সিস্টেম ফাইল গুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে পারতেন, এমনকি ডিলিটও করে দিতে পারতেন! যা আপনার কম্পিউটারে একটি তাৎক্ষনিক BSOD এর সৃষ্টি করে! ইন্নালিল্লাহ!!
স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়ের ব্যাপার কারণ এই ধরণের সার্ভিসিং করা এতে তেমন সহজ নয়। মানে হল, যদি উইন্ডোজ হ্যাং হয়ে যায় তাহলে আপনি আবার এক্সপি/সেভেন/এইট সেটআপ দিয়েই একে ঠিক করে ফেলতে পারেন। কিন্তু যদি এমন টা আপনার অ্যান্ডরয়েড ডিভাইস এর সাথে হয়, আর সবচেয়ে শেষের পন্থাও কাজ না করে, তাহলে কি করবেন? কান্নাকাটি করবেন আর নতুন একটা কেনার প্রস্তুতি নিবেন !
মাইক্রোসফট যেখানে কিছু পরে উইন্ডোজ এর সেই সমস্যার সমাধান করেছে উইন্ডোজ এর সিস্টেম ফাইল গুলোকে ইউজার এর হাত থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করে। সেখানে গুগল শুরু থেকেই এমন সমস্যার হাত থেকে রক্ষিত থাকার ব্যবস্থা করেছে। অ্যান্ডরয়েড ডিভাইস এর সিস্টেম ফাইল গুলোতে রুট অ্যাক্সেস বন্ধ রেখে, যাতে করে আনাড়ি অ্যান্ডরয়েড ইউজার বিসমিল্লায় গলদ না করে বসে!
যদিও বাংলাদেশে এমন সিস্টেম নেই, তবে অ্যান্ডরয়েড ডিভাইস রুটেড না থাকার অন্যতম বড় একটি কারণ হল ক্যারিয়ার গুলোর হস্তক্ষেপ। ব্যাপারটা সহজ ভাষায় বলার চেষ্টা করি:
আপনি যদি আপনার মোবাইল ক্যারিয়ার দ্বারা একটি অ্যান্ডরয়েড ডিভাইস কিনেন, তবে এতে আগে থেকেই ক্যারিয়ার কর্তৃক কিছু অ্যাপ ইন্সটল করা থাকবে যা বেশ কিছু ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস ব্যবহার করা সহজ করে দিবে। যেমনটি বলেছিলাম বাংলাদেশে এমন পদ্ধতির তেমন প্রচলন নেই, তবে ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে এমন প্যাকেজ আকারে বিক্রয় প্রচলিত।
উদাহারনসরূপঃ ভেরিজন, এক প্রকার অ্যাপ দিয়ে থাকে যা আপনার ডাটা ইউসেজ চেক করতে সাহায্য করে। এই অ্যাপ ভেরিজন ব্যবহার করা অনেকটা সহজ করে তোলে। সেখানে নতুন কোন ক্যারিয়ার এর সাথে আপনার ডিভাইসটি ব্যবহার করা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশে আমার জানামতে গ্রামীনফোনের ক্রিস্টাল হচ্ছে ওই প্রকারেরই একটি প্যাকেজের ডিভাইস (গ্রামীনফোন হচ্ছে সেই ক্যারিয়ার)। তবে আমি এই বিষয়ে নিশ্চিত না এতে গ্রামীনফোনের নিজস্ব কোন অ্যাপ ইন্সটল করা থাকে কিনা।
এছাড়া মাইক্রোম্যাক্স এর মোবাইল গুলোতে বেশ কিছু অ্যাপ ইন্সটল করা থাকে যা প্রায় সব ক্ষেত্রেই পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। আপনি হয়ত চাইবেন এই অ্যাপগুলোকে মুছে ফেলতে, কিন্তু মাইক্রোম্যাক্স চায় না আপনি এমনটি করুন।
আর এইটি অন্যতম একটি কারণ আপনার ডিভাইস রুটেড না থাকার পিছনে।
এই বিষয়টি অজানা নয় যে, গুগল নিজেও চায়না ডিভাইস গুলো রুট করা থাকুক। উদাহারনসরূপঃ Nexus 7 কেবল একটি Wifi ডিভাইস। তাই মোবাইল ক্যারিয়ারের কোন হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। কিন্তু এর পরেও কেন ফ্যাক্টরি থেকে একে রুট করা হয়নি কেন?
যেমনটি আমি শুরুতেই বলেছি, নিরাপত্তা হচ্ছে একটি কারণ। কিন্তু গুগল এর ব্যবসা হচ্ছে আরেকটি কারণ। গুগল অ্যান্ডরয়েডকে ফ্রি বিতরণ করছে, কিন্তু ওদের তো মুনাফা করতে হবে নাকি? তা করবে কিভাবে!? সহজ উত্তর, বিজ্ঞাপন!
ডেভেলপারেরা তাদের ফ্রি অ্যান্ডরয়েড অ্যাপ গুলোকে সাপোর্ট করেন গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে। আর বিজ্ঞাপনদাতারা মনে করেন মোবাইল/স্মার্টফোন একটি অন্যতম মাধ্যম তাদের প্রচারের জন্য।
কম্পিউটার ইউজার খুব সহজেই এই অ্যাড গুলো এড়িয়ে চলতে বা ঝেড়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু অ্যান্ডরয়েড ডিভাইসে তেমনটি করা অত সহজ নয়। AdBlock Plus গুগল অ্যাপ স্টোরে পাওয়া গেলেও, রুট না করা থাকলে এই অ্যাপ তেমন ভাল কাজ করে না! একই ব্যাপার এই ধরনের অন্যান্য অ্যাপ গুলোর ক্ষেত্রেও। যদি ঠিকমত অ্যাড ব্লক করতে চান, ডিভাইস রুটেড হতে হবে!
যদিও ব্যাপারটা গুগল এর দিকে তেমন সুন্দর শোনায় না। কিন্তু একটু ভাবলে বিষয়টা বোঝা যাবে। গুগল থেকে অ্যান্ডরয়েড ফ্রি দেওয়া হচ্ছে, আর অধিকাংশ ডিভাইস ই তুলনামূলক সস্তা। অ্যাড বা বিজ্ঞাপন হচ্ছে এক প্রকার মূল্য যা আপনি গুগলকে ইউজার হিসেবে দিচ্ছেন। ডিভাইসকে রুট অ্যাক্সেস না দিয়ে, গুগল এটা নিশ্চিত করে।
সবশেষে বলা যায়, অ্যান্ডরয়েড ডিভাইস রুট করা থাকে না, কারণ গুগল এমনটি চায় না।
অ্যান্ডরয়েড হচ্ছে গুগল এর তৈরি। তাই এটিই নির্দেশ করবে অ্যান্ডরয়েড কি করতে পারবে, কি পারবে না। যেকেউ গুগল এর এই অপারেটিং সিস্টেম ফ্রি ব্যবহার করতে পারবে, তবে কিভাবে করা হবে তার মূল তত্ত্ব গুগল-ই দিবে। এই লেখাটিতে কেবল মাত্র কারণ গুলো উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র, কিন্তু আপনি যাই ভাবেন না কেন, অ্যান্ডরয়েড রুট সম্পর্কিত এই সিদ্ধান্ত গুগলেরই অধিকৃত !
আপনার কি মতামত, রুট অ্যাক্সেস না দেওয়ার সিদ্ধান্তটি কেমন বলে মনে হয়? শুরু থেকেই ডিভাইস গুলো রুট করা থাকলে কি তেমন বড় কোন পার্থক্য হত? মতামতে জানান !