নিউজ ডেস্ক:
দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
গতকাল শুক্রবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫০তম বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে হোটেল প্যাসিও ইয়োকোহামায় এলিভেন্থ ইনফরমাল মিটিং অব সার্ক ফাইন্যান্স মিনিস্টার্স’শীর্ষক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। সার্ক ফাইন্যান্স মিনিস্টার্স কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান এবং নেপালের অর্থমন্ত্রী কৃঞ্চ বাহাদুর মাহারা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
সম্প্রতি বিদেশি একটি সংস্থা বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ওপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯১১ কোটি ডলার পাচার হয়েছে ২০১৪ সালে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। আমদানি-রপ্তানির সময়ে পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করার মাধ্যমেই এই অর্থের বড় অংশ পাচার করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) গত মঙ্গলবার অর্থ পাচারের এ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি আট বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচারের তথ্য প্রকাশ করে আসছে। এবারের প্রতিবেদনে রয়েছে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার বা ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে প্রায় দুই অর্থবছরের বাজেট হতো।
প্রতিবেদনের বিষয়টি তুলে ধরা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত খারাপ। দেশ থেকে অর্থ পাচার হলে দেশের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়। আর এটা শুধু অনৈতিক নয়, সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। বলা যায়, সরকার বিষয়টি খুব কঠিনভাবে দেখছে। বছরের পর বছর এমনটা চলতে দেওয়া যায় না। অর্থ পাচরকারীদের থামাতে হবে। আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত থাকবে।
অর্থ পাচার রোধে বাজেটে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনই বলে দিলে তো সব শেষ হয়ে যাবে। একটু অপেক্ষা করুন। এতটুকু বলতে পারি, অর্থ পাচারের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। এজন্য যা যা প্রয়োজন করা হবে।
এশিয়ার প্রবৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ নয় :
বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের উদাহরণ দিয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতিকে কেউ ঈর্ষা করবেন না। ৫০তম বার্ষিক সম্মেলনে এক সেমিনারে তিনি বলেছেন, এখানে কোন লুকোচুরি নেই। লাতিন আমেরিকা বা অন্য অঞ্চলের চেয়ে এশিয়ার রাজনৈতিক নেতাদের দূরদর্শিতারও প্রশংসা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আগামী ৫০ বছরে এডিবি আরো শক্তিশালী হবে।
যেকোনো বিচারে বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্রুত উন্নতি করছে, এমন দেশের তালিকায় প্রাধান্য এশিয়ার। যদিও সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষের বাসও এই অঞ্চলে। ২০৩০ সালের মধ্যে কীভাবে এসব মানুষের ভাগ্য বদলে দেওয়া যায়, তরুণ প্রজন্মকে হতাশা থেকে বের করে কর্মমুখী করার উপায় কী, অর্থনীতিতে যদি মন্দা আসে তাহলে কী করণীয়, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণে অর্থায়ন হবে কীভাবে- এরকম নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আয়োজন করা হয় জাপানের ইয়োকোহোমা কনভেনশন সেন্টারে।
আয়োজক দেশ জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী তারো আসো বললেন, অর্থনীতিতে ভালো করার কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। সাফল্যের একমাত্র গোপন রহস্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাওয়া।
সার্ক দেশের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক ছিল সাইড লাইনে। সংস্থাটির কার্যক্রমে বেজায় অসন্তুষ্ট অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, সার্ক অর্থমন্ত্রীদের যে কমিটি হয়েছে, তার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। নামেমাত্র একটি তহবিল থাকলেও সেটি যথেষ্ট নয়। শনিবার সম্মেলনের তৃতীয় দিনে বোর্ড অব গভর্নর্সদের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন জাপানের ক্রাউন প্রিন্স নারুহিতো।