নিউজ ডেস্ক:
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সংবর্ধনা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
আগামী ৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে মন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেবে সংগঠনটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেনের অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন সফল মানুষ। তিনি একজন অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা। তার বর্ণাঢ্য জীবন ও মূল্যবান অবদানের প্রতি সম্মান জানাতে বিএমবিএর এই আয়োজন বলে অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানিয়েছেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার অনন্য রেকর্ড রয়েছে। এর আগে বিশ্বের কোনো দেশে কেউ এত বাজেট ঘোষণা করতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪৫টি বাজেট দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছে ১৭টি বাজেট। ১৭টি বাজেটের মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত দিয়েছেন ১০টি বাজেট।
তিনি ১৯৩৪ সালে সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। একজন অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা তিনি। মুহিত পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম বিশিষ্ট নেতা, তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আবদুল হাফিজের তৃতীয় সন্তান। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মুহিত ছাত্রজীবনে অত্যন্ত উজ্জ্বল ও মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে তৎকালীন সারা প্রদেশে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাস করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগদানের পর তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার, পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব্ পালন করেন। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন।
মুহিত পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চিফ ও উপসচিব থাকাকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বৈষম্য বিরাজমান ছিল তার ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন। সংবিধানের বাধ্যবাধকতা পালনে পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এটিই ছিল এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন। ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ এর জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন।
অর্থনৈতিক কূটনীতিতে মুহিত সবিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় তিনি একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব।
১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরামর্শক হিসেবে ফোর্ড ফাউণ্ডেশন ও ইফাদে কাজ শুরু করেন। ১৯৮২ সালের মার্চ মাস থেকে ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে উড্রো উইলসন স্কুলে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। লেখক হিসেবেও মুহিত সমান পারদর্শী। মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনৈতিক সমস্যাবিষয়ক গ্রন্থসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার ২৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের তিনি একজন পথিকৃৎ। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এবং এর পূর্বসুরি ‘পরশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্ত্রী সৈয়দ সাবিয়া মুহিত একজন বিশিষ্ট ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা বেগম সামিনা মুহিত একজন ব্যাংকার এবং মুদ্রানীতি ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিউইয়র্কে, জ্যেষ্ঠপুত্র সাহেদ মুহিত স্থপতি ও তথ্য প্রযুক্তিবিদ হিসেবে ঢাকায় কর্মরত। কনিষ্ঠ পুত্র সামির মুহিত টেক্সাসের হিউস্টনে শিক্ষকতা করছেন।