নিউজ ডেস্ক:
বিশ্বব্যাপী আয় বৈষম্যই হচ্ছে অর্থনৈতিক সহিংসতা। এই সহিংসতা মানব জাতির নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য বড় ধরনের হুমকি। এজন্য বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান ও সমাজিক বৈষম্য কমাতে সংসদে আইন করে সরকারকে চাপে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাশ সত্যার্থী।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল রবিবার ১৩৬ তম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন-আইপিইউ সম্মেলনের মূল সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার মর্যাদা ও কল্যাণ সাধন’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী, আইপিইউর মহাসচিব মার্টিন চুনগং।
কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিশ্বে ৮ জন ধনী লোক রয়েছে, যাদের সম্পদ ৫০টি দেশের সম্পদের সমান। অথচ বিশ্বের একজন মানুষের প্রতিদিন গড়ে আয় দুই ডলারের নীচে। এ সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমপিদেও ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০ কোটি মানুষের দারিদ্র বিমোচন হয়েছে, শিশুদের স্কুলে যাওয়ার হার বেড়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনে সংসদে আইন পাস করে সরকারকে চাপে রাখতে এমপিদের প্রতি আহবান জানান তিনি। বলেন, এমপিরাই কাজটি করতে পারে।
শিশুর অধিকার বিষয়ে কাজ করে নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেন, কয়েকযুগ আগে যেখানে বেতন বৈষম্য ছিলো ১ ভাগের বিপরীতে ৭ ভাগ। বর্তমানে এই বৈষম্য বেড়ে একজনের বিপরীতে ২০০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন গড়ে ৯ হাজার শিশু ক্ষুধা ও দারিদ্রের কারণে মারা যাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে তারা মারা যাচ্ছে না, তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। ২৭ লক্ষ শিশু এই মুহূর্তে স্কুলে যাচ্ছে না। আড়াই লক্ষ শিশু পাচারের শিকার হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বের প্রায় ২৩ কোটি শিশুর জীবন বিপন্ন। তিনি শিশুদের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
গ্লোবাল মার্চ এগেইন্সট চাইল্ড লেবার সংস্থার চেয়ারপার্সন কলাশ আরও বলেন, বর্তমানে ২৩০ মিলিয়ন শিশু পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে জেগে উঠেছে। এসম শিশুরাই শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে। নিজেরাই নিজেদেও রক্ষা করছে। অথম এই বিষয়টি এমডিজিতে ছিলো না। এসডিজিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিষয়টি আমাদের বাজেট ও নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। এজন্য এমপিদের ভ’মিকা নেওয়ার আহবান জানান তিনি। বিশেষ করে শিল্পে উন্নত ও উন্নত দেশগুলোর শিশু কল্যাণে নেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজে এমন একটি ধারণা আছে অসমতা আমাদের জীবনসঙ্গী। অথচ আমাদেরও হাতে রয়েছে। বিশ্বে ডিজিটাল অভ্যুত্থান ঘটছে। জনগণকে সাথে নিয়ে উন্নয়নের অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। নোবেলজয়ী এই শিশু আন্দোলনকারী আরও বলেন, বিশ্বের সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। যা বিশ্বের ৩ দশমিত ৫ দিনের প্রতিরক্ষা বাজেটের সমান। আমি বিশ্বাস করি না এই অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতা বিশ্বের নেই। কৈলাশ আরও বলেন, আজই সময়, এই ঢাকা থেকেই আমাদের শিশুদের জন্য কিছু করার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সহানুভূতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার এখনই সময়। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ স্কুলে গিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
এসময় কৈলাশ সত্যার্থী আরও উল্লেখ করেন, যুব সমাজের নানা সমস্যা রয়েছে। সংসদেও প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। যুব সমাজ খুব সহজেই ভুল পথে পরিচালিত হয়। বর্তমানে এক কোটি শিশু ও যুবক ভুল পথে রয়েছে। তাদেরকে সঠিক পথে আনতে হবে। আমরা যদি এই শক্তিকে কাজে লাগাতে না পারি, তবে তারা হতাশাগ্রস্থ, অসহিষ্ণু এবং সহিংস হয়ে পড়বে। তরুণদের ক্ষমতা যদি নিশ্চিত করা যায়, তাদের কথা যদি শোনা হয়, তাহলে এই পৃথিবী আরও আনন্দময় এবং শক্তিশালী হবে।
নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গে এই নোবেলজয়ী বলেন, যদি নারীকে আমরা সমভাবে ক্ষমতায়িত করতে পারতাম তাহলে গত ৫ হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাসে অনেক সমস্য আমাদের মোকাবেলা করা লাগতো না। যা এখন আমোদের করতে হচ্ছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর এ বিষয়ে সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। এর আগে আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আইপিইউ পরিচালনা পরিষদের এক বৈঠক সকালে হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় সসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ১৩৬তম সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে মনোনিত করা হয়। এছাড়া আইপিইউর সভায় আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র এবং টুভালুকে আইপিইউর নতুন সদস্য দেশ-এর মর্যাদা দেওয়া হয়। ফলে এই ফোরামের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১৭৩-এ উন্নীত হলো।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী
উদ্বোধনী ভাষণে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সমতা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উন্নয়ন থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।