দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে ব্যাংক খাত ও বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তাদের বিপর্যস্ত করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি বিশেষ চক্র সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে দেশের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশপ্রেমের মুখোশধারী এই চক্রের অপপ্রচারে ইতোমধ্যেই দেশের অর্থনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বিশিষ্টজনদের মতে, এই চক্রকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া জরুরি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দেশের ১০টি ব্যাংক বন্ধের ষড়যন্ত্র অনেক আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে শুরু হয়েছিল। ওই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই ব্যাংকগুলোকে কিছু গণমাধ্যমের মাধ্যমে পরিকল্পিত মিডিয়া ট্রায়ালের মধ্যে ফেলা হয়। কয়েকজন নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যাংক লুটের অভিযোগ থাকলেও এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিল আরও অনেক সহযোগী। লুটপাটের পরও ব্যাংকগুলোতে থাকা অর্থ কোথায় গেল এবং কারা এই আমানত সরিয়ে নিয়েছে—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চক্রের সব সদস্যকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য বিদেশি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে দেশি একটি চক্র অনেক আগে থেকেই সক্রিয় আছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশই ১০ ব্যাংক লুট ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা। এখন খোঁজ নেওয়া দরকার এই ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠার সময় মূলধন কত ছিল। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কত টাকা মুনাফা করেছে, কে কত টাকা নিয়েছে এসব খবর নেওয়া দরকার। বিশ্লেষকরা বলেন, দেশে কার্যরত ব্যাংকের লাইসেন্স যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদান করে সে কারণে এসব ব্যাংকের সব দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের নিতে হবে। কারণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমানতকারী এসব ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছেন বা গ্রাহক হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক দায় না নিলে হাজার হাজার আমানতকারীদের এখন কি হবে। আমানতকারীদের সুরক্ষার দায়িত্ব কার। ১০ ব্যাংক ধ্বংস করার পর একই চক্রান্তে ১০ ব্যবসায়ী গ্রুপকে ধ্বংস করার নীলনকশা চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে কাদের স্বার্থে দেশের বিনিয়োগকারী শিল্পোদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থানকারীদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে প্রতিযোগিতা থাকলে বাজারে পণ্যের সরবরাহে ভারসাম্য বজায় থাকে। বিশ্বজুড়ে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা হয়। তবে একটি দেশবিরোধী চক্র দেশের বেসরকারি খাতের যে কোনো ইতিবাচক উদ্যোগকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। সম্প্রতি ১০টি শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অতিরিক্ত তৎপরতায় এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একটি সরকারি সংস্থা এসব ব্যবসায়ীর সম্পদ অনুসন্ধানের ঘোষণা দেওয়ার পর এ নিয়ে সৃষ্ট প্রপাগান্ডার কারণে পুরো ব্যবসায়ী মহলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অনেক উদ্যোক্তা নতুন বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকছেন।
বিশিষ্টজনরা প্রশ্ন তুলছেন, দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তাদের দুর্বল করে দেওয়ার পেছনে কারা এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত? আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতকে ধ্বংস করতে যারা মিডিয়া ট্রায়াল পরিচালনা করছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে তারা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, “আমরা আর্থিক খাতের সব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি।” তিনি আরও জানান, সরকার ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমনে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের পুনর্গঠন ও একটি বিশেষ টাস্কফোর্সের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত। টাস্কফোর্সটি আর্থিক খাতের অপরাধ নির্মূলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।