নিউজ ডেস্ক:
অধিকাংশ সময় আমরা যা কিছু ভাবি বা চিন্তা করি তার খুব কমঅংশই বাস্তবজীবনে প্রতিফলিত হয়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার ফলে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের মনোদৈহিক সমস্যা। কারণ মনের সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন। মনে ভালোলাগা কিংবা মন্দলাগার ফল সরাসরি শরীরের ওপর পড়ে।
পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে মনের লাগাম টেনে ধরা। কারণ অধিকাংশ মানুষের মন বর্তমানে খুব কমসময়ই থাকে। ছুটাছুটি করে অতীতের ব্যর্থতা কিংবা ভবিষ্যতের আশংকায়। এতে করে বাড়ে উদ্বিগ্নতা। একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি কথা বলে নিজের সঙ্গে। যাকে বলে মনকথা। এ কথা চলতে থাকে অবিরাম। বিশেষ করে যারা একাকী সময় কাটান তাদের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। অতিচিন্তা বর্তমান সময়ের আনন্দকে উপভোগ করতে দেয় না।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক মানুষের স্মৃতি পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেছেন যারা অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তা করেন তাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। এ গবেষণায় তারা একদল লোককে কিছু সময়ের জন্যে বিভিন্ন ধরনের মুভমেন্টের প্যাটার্ণ ও রঙ দেখান। কিছু সময় পর তাদেরকে বলতে বলা হয় কে কোন রঙ দেখেছেন। তাদের দেখা প্যাটার্ণটির মুভমেন্ট কি ছিল?
এতে দেখা গেছে যারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তারা প্যাটার্ণের মুভমেন্ট ও দেখা রঙ সম্পর্কে সঠিকভাবে বলতে পারেননি। কারণ এ সময়ে তাদের মন ছিল অন্য কাজে ব্যস্ত। বর্তমানকে বাদ দিয়ে মনের অতীত ও ভবিষ্যতে ভ্রমণ এ ধরনের সমস্যার জন্যে দায়ী বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
দুশ্চিন্তা কমাতে মনকে বিশেষ কিছু কাজ দেওয়া যেতে পারে। এতে বাড়বে মনোযোগ ও একাগ্রতা। চলুন শুরু করা যাক-
একটি ছবির দিকে তাকান। ছবিতে কি আছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখুন। কোনো লেখা বা মেসেজ আছে কি-না দেখুন। ছবির ওপরে কি আছে, নিচে কি আছে। ছবির ডানদিকে তাকান, বামে তাকান। ভালো করে দেখতে থাকুন। দেখা শেষ হলে কিছু সময়ের জন্যে চোখ বন্ধ করে রাখুন। এবার ভাবুন আপনি এতক্ষণ কি কি দেখেছিলেন। একে একে মনে করুন। চাইলে কাগজ কলম নিয়ে তা লিখে ফেলতে পারেন।
আপনি চাইলে একটি ছবির বই খুলে দেখতে পারেন। প্রতিটি পেইজ দেখতে সময় দিন মাত্র ৫ সেকেন্ড। পাঁচ সেকেন্ড পর পর বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকুন। দেখা শেষ হলে মনে করার চেষ্টা করুন কোন পৃষ্ঠার কোন জিনিস আপনার দৃষ্টি কেড়েছে। বিশেষ কোনো কিছু মনে দাগ কাটলে সেটাও মনে করতে পারেন। এতে করে আপনার মন দ্রুত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম হবে। আপনি আগের চেয়ে কম সময় যে কোনো বিষয়ে ভাবতে পারবেন ও মনে করতে পারবেন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগের চেয়ে সহজ।
মনকে জিজ্ঞেস করুন
মনে অনেক প্রশ্নই আসতে পারে। এক্ষেত্রে বিষয়টি ভাবুন যা নিয়ে আপনি ভাবছেন তা আপনার জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে মনকে জিজ্ঞেস করুন। দেখবেন মন ঠিকই আপনাকে উত্তর দিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে আপনাকে আরেকটি বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। তা হচ্ছে, মনের গহীনের অবাঞ্চিত চিন্তাভাবনাকে পাত্তা না দেওয়া। প্রতিটি কাজে ইতিবাচক হোন। দেখবেন মনে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা খুব বেশি জায়গা করতে পারবে না। মানসিকভাবেও আপনি ফুরফুরে থাকবেন।
নিজেই নিজেকে পর্যবেক্ষণ করুন
মনের চিন্তার গতিবিধি নিজেই লক্ষ্য করুন। আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোন সময় মন কোন বিষয়ে চিন্তাগ্রস্ত। কোন কোন বিষয়গুলো নিয়ে অপ্রয়োজনীয় চিন্তা না করলেও চলে তা ঠিক করুন। কারণ অপ্রয়োজনীয় চিন্তাভাবনা আপনার মনের শক্তিকে বর্তমানে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে দেয় না। মনোচিকিৎসকরা মনের লাগাম টেনে ধরতে কোগনেটিভ থেরাপি দিয়ে থাকেন। যাতে করে মানসিক প্রশান্তি বজায় থাকে, দুশ্চিন্তা থেকে মন ও শরীর মুক্ত থাকে। একাকী সময় যখন মনে অবাঞ্চিত চিন্তা এসে আপনার মানসিক প্রশান্তিকে নষ্ট করে দিতে পারে বলে আপনি মনে করেন, তখনই প্রিয় কোনো লেখকের বই নিয়ে বসে পড়ুন। ঢুকে যান গল্পের গভীরে। চাইলে লেখনীর মাধ্যমেও আপনার মানসিক এ অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়ুন। লিখে ফেলুন কাল্পনিক চরিত্র দিয়ে জীবনে ঘটে যাওয়া বিশেষ কোনো গল্প।
বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের জীবনে অনেক কিছুই ঘটে যার ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বর্তমান সময়কে কাজে লাগাতে চিন্তা করুন এখন আপনার কী করণীয়। সে অনুযায়ী কাজে লেগে পড়ুন। তবে তা হতে হবে ইতিবাচকভাবে। চিন্তা করতে করতে যাতে সময় নষ্ট হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনি যখন কাজে ব্যস্ত থাকবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই অপ্রয়োজনীয চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন। কোনো তথ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলে কাউকে ফোন করে সঠিক তথ্য জেনে নিতে পারেন। এতে আপনার দুশ্চিন্তা কমবে।