নিউজ ডেস্ক:
অর্থ সম্পদ ও টাকা-পয়সার মায়া কাটানো মানুষের পক্ষে বেশ কঠিন কাজ। নিজের খাওয়া, পরা কিংবা ভোগ-বিলাসিতায় অর্থ খরচ করতে কারও সমস্যা হয় না। যত সমস্যা সব মানুষের পাশে দাড়াঁনোর সময়, দান-খয়রাত করার সময়। সদকা মানে দান করা। ইসলামে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাময় ইবাদত।
সম্পদশালীরা গরীব-অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও দূর করার চেষ্টা করে এমন মহৎ ইবাদতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। আর যাদের সম্পদ কম তাদের জন্য দান-খয়রাত বাধ্যতামূলক নয়। তবে তারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এ কাজ করতে পারেন, তাতে নিষেধাজ্ঞা নেই।
দান-সদকা মানে যে শুধু টাকা-পয়সা দিতে হবে তা নয়। বরং খাদ্য, বস্ত্র ইত্যাদির মাধ্যমে দান-সদকা করা যায়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জাবের (রা) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে কোনো (যখন) মুসলিম কোনো গাছ লাগায়, পরে তা থেকে যতটা খাওয়া হয়, তা তার জন্য সদকা হয়, তা থেকে যতটুকু চুরি হয়, তা তার জন্য সদকা হয় এবং যে ব্যক্তি তার ক্ষতি করে, সেটাও তার জন্য সদকা হয়ে যায়।’ –সহিহ মুসলিম: ১৫৫২
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান বিবস্ত্র মুসলমানকে বস্ত্র পরিধান করালে কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তাকে বেহেশতের সবুজ পোশাক পরাবেন। কোনো মুসলমান তার ক্ষুধার্ত ভাইকে অন্ন দান করলে এবং তাকে পিপাসায় পান করালে আল্লাহপাক তাকে বেহেশতের মোহর করা শরাব পান করাবেন।’ -আবু দাউদ ও তিরমিজি
হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় বলা হয়েছে, সব ভালো কাজই হচ্ছে- সদকাস্বরূপ। যারা ভালো কাজের জন্য উৎসাহ দেয় তারা ভালো কাজ সম্পাদনকারীদের সমান সওয়াব পায়। আর আল্লাহতায়ালা অসহায়দের সাহায্য করাকে পছন্দ করেন।
যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখেরাতের সব বিষয় সহজ করে দেবেন
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, দানশীলতা ও সহমর্মিতা নেয়ামতকে বৃদ্ধি করে এবং শহরসমূহকে আবাদ করে। ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, বিশেষ কল্যাণ দুই শ্রেণীর লোকের জন্য- যারা অধিক দান করে, আর যে গোনাহ করলে দ্রুত তওবা করে।
হজরত রাসূলুল্লাহ হাদিসে (সা.) ইরশাদ করেছেন, সাত প্রকার লোককে আল্লাহতায়ালা (কিয়ামতের দিন) তার আরশের ছায়ায় স্থান দান দেবেন। সেদিন আরশের ছায়া ছাড়া আর অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। ওই সাত প্রকার লোকের মাঝে অন্যতম হলো- গোপনে দানকারী।
সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখেরাতের সব বিষয় সহজ করে দেবেন।’ –সহিহ মুসলিম
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য জায়গায় দান করার নির্দেশ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় করো। অন্যথায় সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। -সূরা মুনাফিকুন: ১০
‘আর ব্যয় করো আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালোবাসেন। -সূরা বাকার: ১৯৫
অনেকে দান-সদকা করে খোঁটা দেয়। এটি হারাম এবং নিন্দনীয় কাজ। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন বলে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খায়রাতকে বরবাদ করে দিও না।’ -সূরা বাকারা: ২৬৪
হাদিসেও এ সম্পর্কে নিষেধ করা হয়েছে। হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে আল্লাহতায়ালা তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। আবু যর (রা.) বললেন, ওরা ধ্বংস হোক, ক্ষতিগ্রস্ত হোক- কারা তারা হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে যে কাপড় পরিধান করে, দান করে যে খোঁটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে যে ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রয় করে।